কাবুল: ১৫ অগস্ট তালিবানরা কাবুলের দখল নেওয়ার আগে তিনিই তাদের আফগানিস্তানের রাজধানী শহরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন (former Afghanistan President Hamid Karzai)। সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছেন আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই (Hamid Karzai)। হামিদের বক্তব্য, ‘আমি শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর করতে চেয়েছিলাম। কোনওরকম বিশৃঙ্খলা চাইনি। তাই তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতা করতে নিজেই তাদের কাবুলে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।’
হামিদ কারজাইয়ের কথা অনুযায়ী, ‘তালিবান গোষ্ঠী যদিও চেয়েছিল, ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে কাবুলের বাইরে আলোচনায় বসতে।’
তালিবান গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তিচুক্তির প্রেক্ষিতে আফগানিস্তান থেকে ধাপে ধাপে সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করে আমেরিকা। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্তে ক্রমশ দুর্বল হতে শুরু করে আফগান বাহিনী। খুব দ্রুত আফগানিস্তানের নানা প্রদেশের দখল নিতে শুরু করে তালিবান যোদ্ধারা। আফগান সেনাকে কোণঠাসা করে ক্রমশ তারা কাবুলের দিকে এগোতে থাকে।
দীর্ঘ প্রায় দু-দশক মার্কিন সেনার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া সত্ত্বেও তালিবানদের সামনে কোনওরকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি কারজাইয়ের সেনা। তালিবানদের কাছে পরাজয় নিশ্চিত জেনে, অনেক সেনাকর্তাই আত্মরক্ষায় আফগানিস্তান ছেড়ে পালাতে থাকেন। ফলে, কাবুলের পতন ছিল সময়ের অপেক্ষা। হামিদ কারজাইও তা বুঝে গিয়েছিলেন। পরাজয় নিশ্চিত জেনে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেন তত্কালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। শেষ পর্যন্ত ১৫ অগস্ট কাবুলের পতনের সঙ্গেই আফগানিস্তানের ক্ষমতার দখল চলে যায় তালিবানদের হাতে।
যদিও আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের দাবি, ‘একটা সময় আশঙ্কা তৈরি হয়, অবাঞ্ছিত কেউ আমাদের দেশ লুঠ করতে পারে। আমাদের দোকানপাঠেও লুঠপাট হবে। তাই আফগানিস্তানের জনগণের সুরক্ষার কথা ভেবে, কাবুল-সহ গোটা দেশে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়, তালিবান গোষ্ঠীর কাছে আমাকে অনুরোধ করতে হয়েছে, দেশকে সুরক্ষিত করুন।’
আরও পড়ুন- Delhi pollution:পাকিস্তানের বাতাসেই দূষণ, যোগীরাজ্যের আইনজীবীর অদ্ভুত সওয়াল সুপ্রিম কোর্টে!
যদিও প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি আফগান নাগরিকদের অন্ধাকারের মুখে ঠেলে দিয়ে, দেশকে চরম অস্থিরতার মধ্যে ফেলে, ধনসম্পদ নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু, কারজাই সেই অভিযোগ আগেই খারিজ করে জানিয়েছিলেন, তিনি কাবুল ছাড়ার সময় সঙ্গে করে কিছুই আনেননি।
হামিদ কারজাইয়ের আরও দাবি, ক্ষমতা হস্তান্তরের পরদিনই তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ফের একপ্রস্থ কথা হয়েছিল। কারজাই সরকারের কোনও আমলা-আধিকারিককে তারা সরাতে চায়নি। সরকারি আধিকারিকদের উপর কোনওরকম হামলা হবে না, সেই প্রতিশ্রুতিও তালিবানরা দিয়েছিল। কিন্তু শান্তিপূর্ণ ভাবে হস্তান্তর চুক্তির জন্য পদস্থ সরকারি আধিকারিকরা দেশ ছাড়েন।
কারজাই মনে করেন, আফগান নাগরিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে, এমন পদক্ষেপ এ বার করতে হবে তালিবান গোষ্ঠীকে। তালিবান শাসনে আফগানিদের মৌলিক অধিকার নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশের সাধারণ নাগরিক সমাজ, বিশেষত, মহিলাদের মানবাধিকার যে বিপন্ন, তা তিনি স্বীকার করে নেন।