ম্যানহ্যাটন : টানা ১৮ মাস পর ফের শুরু হল নিউ ইয়র্কের ব্রডওয়ে থিয়েটার ম্যাজেস্টিক। গান, বাজনা এবং মানুষের উচ্ছাসে ফের একবার মুখরিত হবে এই থিয়েটার। ২০২০ সালে সারা বিশ্বের উপরই পড়েছিল করোনার থাবা। করোনা মহামারীতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যায় স্কুল ও কলেজ, অফিস ও রেস্তোরাঁ। বাদ যায়নি সিনেমা হল কিংবা থিয়েটার। যেখানেই একসঙ্গে অনেক মানুষ ভিড় করতে পারবেন, সেই সব স্থানগুলি আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নিউ ইয়র্কের টাইম স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রডওয়ে থিয়েটার। তারপর দেখতে দেখতে কেটে গেল ২০২০। চলে এল ২০২১। কিন্তু তারপরেও খুলল না ব্রডওয়ে থিয়েটার। কারণ তখন সারা বিশ্বের উপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ। এখন আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে সংক্রমণ। তাই নতুন করে ফের একবার ব্রডওয়ে থিয়েটারে মঞ্চস্থ হবে দ্য ফ্যান্টম অফ দ্য অপেরা (The Phantom of The Opera)।
লকডাউন হওয়ার প্রায় ১৮ মাস বাদে ব্রডওয়ে থিয়েটারের খুলে যাওয়ায় থিয়েটারের কর্মী থেকে শুরু করে নাটকের সদস্য, খুশি সকলেই। এই থিয়েটারে অন্যতম বিখ্যাত নাটক হল ফ্যান্টম। ব্রডওয়ে থিয়েটারে সব থেকে দীর্ঘ দিন ধরে চলা নাটক ফ্যান্টমের অভিনেত্রী মেগান পিসর্ন জানান, মহামারীর কারণে থিয়েটার বন্ধ হয়ে যেতে প্রায় ১৮ মাস ধরে ঘরে বসে রয়েছেন তিনি। তাঁর এই কাজ নিয়েও তাঁকে যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। যার কারণ হিসাবে অভিনেত্রী মেগান জানান, নাটকের মধ্যে নিজের দুই সহ অভিনেতার সঙ্গে চুম্বনের দৃশ্য থাকতো তাঁর। কিন্তু করোনার কারণে এই ধরণের দৃশ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। কিন্তু নাটকের অংশ হিসাবে প্রত্যেকটি দৃশ্যই জরুরি। নাটকের সময় মাস্ক ছাড়া অভিনয় করতে হত এবং একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, সেটাও সম্ভব হত না। তাই সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে তাঁদের এই নাটক বন্ধ করে দিতে হয়। মেগান জানিয়েছেন, তাঁর বা তাঁর সহ-অভিনেতাদের করোনা হয়নি। তাঁদের মধ্যে কোনও একজনও যদি করোনা আক্রান্ত হতেন, তাহলে তাঁর থেকে থিয়েটারের প্রত্যেকের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল বলে মনে করছেন তিনি।
আরও পড়ুন : টিকাকরণ সম্পূর্ণ না হলে বিনা বেতনে সাসপেন্ড, নির্দেশ দিল আইবিএম
ব্রডওয়ে থিয়েটার, নিউ ইয়র্ক পর্যটনের একটি অন্যতম অংশ। কিন্তু নিউ ইয়োর সরকার এই থিয়েটারকে বন্ধ করে দেয়। থিয়েটারের বেশ কিছু কাস্ট ও ক্রু মেম্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিল। যার ফলে ২০২০ সালের ১২ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় এই থিয়েটার। চলতি বছরের মহামারীর ফটোকপি হ্রাস পেলে ফের ফ্যান্টম নাটকের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়। কিন্তু এর মধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ড্রেসার জেনিফার আরনল্ডর, যিনি ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে এই নাটক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এর মধ্যেই আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডের খুনের ঘটনাটি ঘটে। একজন শেতাঙ্গ পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই আমেরিকা জুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। যার আঁচ এসে লাগে ব্রডওয়ে থিয়েটারে। কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের উপর শেতাঙ্গদের এরূপ অত্যাচারের প্রতিবাদে নতুন পদক্ষেপ নেয় ব্রডওয়ে থিয়েটার। চলতি বছরের অগস্ট মাসে ফ্যান্টম নাটকে ক্রিস্টিন চরিত্রের জন্য প্রথম একজন কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেত্রীকে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মেরিল্যান্ড-নিউ ইয়র্ক, মৃত বেড়ে ৪১
ব্রডওয়ে থিয়েটারে কাজ শুরু হলেও থিয়েটার কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করেছে তার কর্মী এবং নাটক দলের জন্য। যেখানে বলা হয়েছে নাটকের সঙ্গে যুক্ত কাস্ট ও ক্রু মেম্বরদের সকলকেই টিকা নিতে হবে। তার সঙ্গে সপ্তাহে অন্তত দু’বার করে সোয়াব টেস্ট করাতে হবে।