কাবুল: পাকিস্তানি মুদ্রায় নয়। আফগানিস্তানের সমস্ত ব্যবসা ও আর্থিক লেনদেন হবে আফগানিস্তানের প্রচলিত মুদ্রাতেই। যদি কেউ লেনদেনের ক্ষেত্রে পাকিস্তানি মুদ্রা ব্যবহার করে থাকে তবে তাকে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে। এমনটাই নির্দেশ তালিবান প্রশাসনের।
সম্প্রতি পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যম দ্বারা প্রচারিত খবরে বলা হয় আর্থিক লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের থেকে চালু হতে পারে পাকিস্তানি মুদ্রা ব্যবহার। আর এই খবর সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে নয়া গঠিত ইসলামিক আমিরাত। সাধারণ আফগান নাগরিকদের মধ্যেও এই নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কিছুদিন আগে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী সাখাওয়াত তারিন বলেন, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সংকটের ফলে বর্তমানে আফগানিস্তানের অর্থভাণ্ডার বিরাট ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে কাবুলের কাছে। তাই পাকিস্তানের টাকাতেই বাণিজ্য সহ অন্যান্য আর্থিক লেনদেন করবে আফগানিস্তান। আফগানিস্তানে তালেবান শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশটিতে আর্থিক অনুদান বন্ধ করেছে আইএমএফ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। আন্তর্জাতিক এই দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই সিদ্ধান্তের পর এমন মন্তব্য শোনা গিয়েছে ইসলামাবাদের তরফে। পাশাপাশি আফগানিস্তানের আর্থিক উন্নয়ন পর্যালোচনা করতে পাকিস্তান থেকে একটি প্রতিনিধি দল সে দেশে পারে বলে জানান অর্থমন্ত্রী সাখাওয়াত তারিন।
আরও পড়ুন: ‘৯/১১’, ‘পশ্চিমী চাপেই’ বাতিল হল তালিবান সরকারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
পাক সংবাদমাধ্যম প্রচারিত খবরটি সামনে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পাক বিরোধী প্রচার শুরু করেছেন আফগান নাগরিকেরা। হ্যাশট্যাগ “উই আর রেসিডেন্ট অফ আফগানিস্তান আফগানিস্তান ন্যাশনাল আইডেন্টি এন্ড ইউজিং আফগান কারেন্সি ইস আওয়ার ন্যাশনাল রেস্পন্সিবিলিটি” বলে প্রচার শুরু হয়েছে।
আব্দুল করিম সোশ্যাল মিডিয়া ইউজার জানান, “আমি আফগানিস্তানের মুদ্রার ব্যবহার করব। দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে আফগানিস্তানের মুদ্রা ব্যবহার একমাত্র পথ।”
মোহাম্মদ শাহিন নামে এক ব্যক্তি তালিবানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আফগানিস্তানের আর্থিক পুনরুদ্ধার পুরোটাই নির্ভর করছে তালিবানদের ওপর। দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে দেশের জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে তাঁদের।
আরও পড়ুন: নিজেদের বোরখায় ঢেকে তালিবানের সমর্থনে মিছিল শতাধিক মহিলার
অন্যদিকে তালিবানপন্থীদের মধ্যেও পাকিস্তানের টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্পষ্ট বিরোধিতার ছাপ ফুটে উঠেছে। হাম্মাদ আফগান বলেন, যদি কেউ জাতীয় পরিচয় মূল্যবোধ বুঝতে পারে তার উচিত লেনদেনের ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের মুদ্রার ব্যবহার করা। একই বক্তব্য শেখ আব্দুল হামিদ নামে আরও এক তালিবানপন্থীদের নাগরিকের।
রাজনৈতিকভাবে মত পার্থক্য থাকলেও পাকিস্তানি টাকা ব্যবহারের ইস্যুতে ঐক্যমত্যে এসে দাঁড়িয়েছে আফগান আম জনতা।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী দিনে আফগানিস্থানে নিজেদের মুদ্রা লেনদেনের পরিকল্পনা কার্যকর করতে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে পাকিস্তানকে। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।