কাবুল: সাল ২০২০। আফগানিস্তানে শিখ অধ্যুষিত এলাকায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। সেইসময় শিখ সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আতঙ্কে পাততাড়ি গুটিয়ে আফগানিস্তান ছেড়েছিলেন। দেশ ছেড়েছিলেন সুন্দর সিংয়ের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েও। কিন্তু পঞ্চান্ন বছরের প্রৌঢ় সুন্দর মাতৃভূমি ছেড়ে চাননি। গত ১৮ জুন কাবুলের শিখ গুরদোয়ারায় জঙ্গি হামলায় প্রাণ গেল সেই সুন্দর সিংয়ের। তাঁর এভাবে মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না পরিবার। আফগানিস্তানকে সুন্দর সিং প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলেন। এমনটাই বলছিলেন সুন্দরের শ্যালক অর্জিত সিং। অর্জিতের চোখের জল বাঁধ মানছিল না। তাঁর কথায়, এরকম নিষ্ঠুর মৃত্যুর কথা জামাইবাবু কখনও ভাবতে পারেননি।
১৮ জুন কাবুলের ওই গুরদোয়ারায় জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস (খোরাসান) গোষ্ঠী। হামলার পর একটি ভিডিয়ো ফুটেজ দেখে অর্জিত তাঁর জামাইবাবুর রক্তাক্ত দেহ শনাক্ত করেন। গুরদোয়ারার বাইরে পড়েছিল সুন্দর সিংয়ের নিথর দেহ। অর্জিত বলেন, আমি জামাইবাবুর দেহ ভারতে নিয়ে যেতে চেযেচিলাম। কিন্তু কোনও বিমান পাইনি বলে দেহ নিয়ে যাওয়া যায়নি। আমার দিদি এবং তাঁর ছেলেমেয়েরা শেষ দেখাটুকু দেখতে পায়নি। কাবুলেই শেষকৃত্য করা হয়।
গত কয়েকবছর ধরেই আফগানিস্তানে জঙ্গিরা সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়কে টার্গেট করে চলেছে। ২০১৮ সালে জালালাবাদে এক আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ১৯ জন শিখের। তখনও হামলা হয়েছিল এরকমই এক গুরদোয়ারায়। ওই হামলার পরই প্রায় ১৫০০ শিখ আফগানিস্তান ছেড়ে ভারতে ফিরে আসেন। ২০২০ সালে কাবুলে আর এক গুরদোয়ারায় আইএস (খোরাসান) গোষ্ঠীর হামলায় অন্তত ২৫ জন শিখ ভক্তের মৃত্যু হয়। ওই হামলার পর শিখ সম্প্রদায়ের বাকি লোকজনও আফগানিস্তান ছেড়ে পালান। স্থানীয় সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে গুটি কয়েক শিখ রয়ে গিয়েছেন। তাঁরাও এখন আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য প্রহর গুণছেন। কাবুলের ওই হামলার পরের দিনই, অর্থাৎ ১৯ জুন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ১১১ জন আফগান শিখ এবং হিন্দুকে ইমার্জেন্সি ভিসা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: Deucha Pachami: দেউচা পাঁচামির জমি অধিগ্রহণ নিয়ে রাজ্যের কাছে হলফনামা চাইল হাইকোর্ট
প্রাক্তন আফগান শিখ সাংসদ নরেন্দ্র সিং খালসা রেডিয়ো আজাদিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা নেই। আমাদের কোনও রাজনৈতিক পরিচয়ও নেই। আমাদের কথা কেউ ভাবে না। আগের আফগান সরকারও ভাবেনি, এখনকার তালিবান শাসকরাও ভাবেনা। এটাই সবচেয়ে খারাপ লাগে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে জালালাবাদ হামলায় নরেন্দ্র সিংয়ের বাবা অবতার সিং খালসা প্রাণ হারিয়েছিলেন। নরেন্দ্র এবং তাঁর পরিবার এখন ভারতেই রয়েছেন। আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়ার কোনও ইচ্ছেই আর তাঁদের নেই। তালিবান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র আবদুল নাফি টাকুর বলেন, শিখ এবং হিন্দুদের ভারতে যাওয়া কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। আমাদেরও কিছু করণীয় নেই।