কলকাতা: শ্বেতি (Vitiligo) যেন এক আতঙ্ক। মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে সাদা দাগ। ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মতো। কিন্তু শ্বেতির শুরুটা ধরতে পারলে, হয়ত চিকিৎসায় সাড়া মিলতে পারে। এটি এমন এক অসুখ, যা আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে মনে ঢুকে পড়ে নেতিবাচক মনোভাব। ভিটিলিগো বা শ্বেতি রোগ ত্বকের যেকোনো অংশে হতে পারে। মুখ, ঘাড়, হাত এবং ত্বকের ভাঁজে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে এর শুরু হতে পারে ঠোঁট, আঙুলের ডগা থেকে। তবে হ্যাঁ উপসর্গ দেখামাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, দেরি না করেই।
শ্বেতি কেন হয়?
চিকিৎসকদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শ্বেতি হয় অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত প্রসাধনীগুলিতে বর্তমানে অধিক মাত্রায় রাসায়নিকের ব্যবহার হচ্ছে। এই সব রাসায়নিক সকলের ত্বক সহ্য করতে পারে না। সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। অনেকেই চুলে রংবেরঙের কালার করতে ভালবাসেন, কেউ আবার সাদা চুল রং করতেও হেয়ার ডাই ব্যবহার করেন। বিশেষ করে হেয়ার ডাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরি। এতে থাকা পি-ফেনিলেনেডিয়ামাইন বা ‘পিপিডি’ শ্বেতি ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া সাবধানতা অবলম্বন করুন ডিও, পারফিউম স্প্রে, ফরসা হওয়ার বিভিন্ন ক্রিম, ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো সানস্ক্রিন, অ্যাডহেসিভ রয়েছে এমন কোনও আঠালো দ্রব্য, ডিটারজেন্ট, কড়া অ্যান্টিসেপটিক থেকেও। এগুলি ব্যবহার করলেই যে শ্বেতি হবে এমনটা নয়, তবে যাঁদের ত্বক এই সব রাসায়নিকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না, বিপদ ঘনাবে তাঁদেরই।
শ্বেতি রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
ভিটিলিগো সাধারণত মুখ, হাত, বাহু, পায়ে এবং পায়ে প্রথম দেখা যায়।
ভ্রু এবং মুখের লোমের রঙ বদলে সোনালি হয়ে যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি উপসর্গবিহীন এবং চুলকানি বা ব্যথার মতো কোনো উপসর্গ নেই।
থাইরয়েড এবং অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যা থেকেও শ্বেতি হতে পারে।
কীভাবে এর চিকিৎসা সম্ভব?
অনেকের ধারণা, এই রোগের চিকিৎসা হয় না। তবে ওষুধ ও অস্ত্রোপচার দুভাবেই এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব। ত্বকের স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসকেরা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ক্রিম দেন। কিছু ক্ষেত্রে ফোটোকেমো থেরাপিও করানো হয় বা আক্রান্ত অংশে ওষুধ লাগিয়ে রোদে দাঁড়িয়ে অতিবেগনি রশ্মিও গায়ে লাগানোর কথাও বলে থাকেন চিকিৎসকেরা। ওষুধ খাওয়ার পরেও যদি রোগটি ঠোঁট ও আঙুলের ডগায় ছড়িয়ে যায়, তখন চিকিৎসকেরা স্কিন গ্রাফ্টিং করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে প্রথম থেকে ঠিক মতো চিকিৎসা না করালে এক বার যদি তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তা হলে কিন্তু মুশকিল। শ্বেতির সঙ্গে কারও যদি থাইরয়েড, ডায়াবিটিস, অ্যাজমা, এগজ়িমা বা অন্য অটোইমিউন ডিজ়জ় থাকে, যা শ্বেতির চিকিৎসাকে প্রভাবিত করতে পারে, সে ক্ষেত্রে রোগটি সারানো সহজ নয়।