নারী ক্ষমতায়নের পথে দীর্ঘদিন ধরেই কাঁটা হয়ে ছিল এ দেশে মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স।স্বাধীনতার পর পর ১৯৪৯ সালে ছিল ১৫, তার প্রায় ৩০ বছর পর এই বয়স বাড়িয়ে করা হয় ১৮। কিন্তু যে সংসারধর্ম ও মাতৃত্বের কথা ভেবে মেয়েদের ন্যূনতম বয়স ১৮ করা হয় সেই সমস্যার কোনওটারই বিজ্ঞানসম্মত সুরাহা হয়নি। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর অবশেষে মেয়েদের ন্যূনতম বয়স বাড়িয়ে ২১ করার প্রস্তাব হল। ১৯৭৮ থেকেই ছেলেদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স ছিল ২১। এটা তাই আছে৷মূলত মাতৃত্বের বয়স, গর্ভধারণের সময় জটিলতা, সন্তানের পুষ্টির অভাব এবং মা ও সন্তানের মৃত্যুরোধ করতেই এই প্রস্তাব নেওয়া হয়। এই পদক্ষেপ গর্ভধারণ ও শিশুর পুষ্টির নিরিখে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ কলকাতা টিভির প্রতিনিধি নিমাই পান্ডাকে জানালেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শিল্পীতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শিল্পীতা বন্দ্যোপাধ্যায়
গর্ভধারণ ও মাতৃত্ব
ভারতের মতো দেশে যেখানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়েছে, সেখানে মাতৃত্ব ও গর্ভনিরোধক সুযোগসুবিধে তেমন ভাবে সকলের জানা নেই। এর ফলে ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়, এক বছরের মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে অনেকেই। এর ফলে সন্তান ও মায়ের একাধিক শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।প্রাণহানির প্রবণতা বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা
কৈশোরে যে মেয়েরা অন্তঃসত্ত্বা হয়, তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা অনেক বেশি দেখা দেয়। এই অবস্থাকে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া বলা হয়। যেটা সঠিক বয়সে গর্ভধারণ করলে হয় না। একইভাবে সন্তানের জীবনেরও ঝুঁকি থাকে। প্রিম্যাচিওরড বেবি হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলক থাকে অনেক বেশি। এ ছাড়া নবজাতকের ওজন কমের সমস্যাও থাকে। অন্য দিকে, এই অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের মধ্যে এই উচ্চ রক্তচাপ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অন্যদিকে মা ও সন্তানের জীবন সংশয়ের আশঙ্কাও থাকে।
গর্ভধারণ ও রক্তাল্পতা
কৈশোর অবস্থায় গর্ভধারণের ফলে কয়েকগুণ বেড়ে যায় অ্যানিমিয়ার সমস্যা। এই অবস্থায় মায়ের শরীরে রক্তে থাকা লোহিত কণিকা হ্রাস হয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে সন্তানের শারীরিক বিকাশের উপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১৫ থেকে ১৯ বছরের মেয়েদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হল গর্ভধারণের ও সন্তান প্রসবের সময়ে নানা ধরনের জটিলতা ।
নবজাতকের স্বাস্থ্যজনিত জটিলতা
কৈশোর অবস্থায় মা হলে তার প্রভাব পড়ে নবজাতকের উপরও। যেমন–
নবজাতকের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সমস্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জীবনভর সঙ্গে থাকে।
প্রিম্যাচিওরড বাচ্চা মানেই ওজন কম থাকা। যে সব শিশুর ওজন কম থাকে তাদের মধ্যে নিশ্বাসের সমস্যা দেখা যায়। ছোটবেলায় এদের খাওয়াদাওয়া নিয়ে সমস্যা দেখা যায়। আবার বড় হলে ওজন কমের কারণে ডায়বিটিস বা হৃদরোগের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
নবজাতকের কম ওজন প্রভাব ফেলে মস্তিষ্কের উপরও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই ধরনের বাচ্চাদের নতুন কিছু শিখতে গেলে সমস্যা হয়।
তবে এখানেই শেষ নয়, কৈশোরে সন্তান ধারণ করলে নবজাতকের প্রাণহানির সম্ভাবনাও থাকে প্রবল।ন্যূনতম বিয়ের বয়স ২১ হলে যদি কেউ ২২বছরে মা হয়, তা হলে সেটা গর্ভধারণের সঠিক সময়। এই সময় মিসক্যারেজের প্রবণতা থাকে না।পাশাপাশি, ক্রোমোজোমাল ডিসঅর্ডার, জেস্টেশনাল ডায়বিটিস ও ব্লাড প্রেসারের মতো সমস্যার প্রবণতা অনেকটাই কম থাকে।
পাশাপাশি, একজন কৈশোরের তুলনায় ২২ বছরের মহিলার মানসিক ও শারীরিক গঠন আরও বেশি পুষ্ট থাকে। এর ফলে নবজাতকের যত্ন ও পর্যাপ্ত পুষ্টির বিষয়টি সহজেই সম্ভব হয়।