কলকাতা: সাইনাস (Sinus) দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীরের এই অঙ্গ মূলত বাতাস চলাচলে সাহায্য করে। নাকের হাড় বাঁকা থাকলে এই সমস্যা হয়। আবার অ্যালার্জির কারণেও সাইনোসাইটিস হয়। সাইনাসের সমস্যা নিয়ে জেরবার হওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। সামান্য নিয়মের এদিক-ওদিক হলেই মাথাচাড়া দেয় এই সমস্যা। সাইনাসের উপসর্গগুলি অনেকেই উপেক্ষা করেন, যার জেরে পরবর্তীকালে মারাত্মক আকার ধারণ করে। তবে ঘরোয়া কিছু উপায়ে সাইনাসের সমস্যাকে বশ মানানো সম্ভব। দেখে নিন সে সব পদ্ধতি।
গরম তরল খাবার- সাইনাসের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রধান হাতিয়ার গরম তরল খাবার। এতে নাসারন্ধ্রে জমে থাকা মিউকাস অনেক তরল হয়ে যায়। এতে দূর হয় কপালে চাপ ধরে থাকা ব্যথাও। ন্যাজাল ফ্লাশিং (Nasal Flushing) সাইনাসের এই ব্যথা থেকে উপশম পেতে সাইনাসের ব্লকেজগুলো পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এর জন্য এক নাক থেকে জল টেনে অন্য নাক থেকে বের করলে শ্লেষ্মা ঝিল্লি বা মিউকাস মেমব্রেনস আর্দ্র থাকে এবং এই সমস্যা হয় না। এই পদ্ধতি প্রয়োগে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যাকেও দূর করা যায়। ন্যাজাল ফ্লাশিং-এর জন্য একটি পাত্রে গরম জল একটু ঠাণ্ডা করে রাখতে হবে। পাত্রের মুখ সরু থাকলে ভালো। এ বার মাথাটা সিঙ্কের কাছে নিয়ে গিয়ে বাঁ-দিকে হেলাতে হবে। পাত্রের সরু মুখটি ডান নাকের কাছে নিয়ে এসে নাকের ভিতরে জল ঢোকাতে হবে। আরেকটি নাক থেকে সেটি বের করে দিতে হবে। নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং মাথা যন্ত্রণা বা সাইনাসের অন্যান্য সমস্যাও দূর হবে।
আরও পড়ুন:Chardham Yatra 2023 | বৃষ্টি-তুষারপাতে বন্ধ চারধাম যাত্রা, পুণ্যার্থীরা নিরাপদে
নাক দিয়ে জল টানা- নাক দিয়ে জল টানার থেকে চেয়ে ভালো টোটকা সাইনাসের ক্ষেত্রে আর কিছু নেই। সামান্য উষ্ণ গরম জল হাতে নিয়ে এক নাক দিয়ে টেনে, অন্য নাক দিয়ে বার করে দিতে হয়। এই পদ্ধতিতে শ্বাসনালী পুরো পরিষ্কার হয়ে যায়। খুব তাড়াতাড়ি সাইনাসের রোগী আরাম পান। (Sinus)ভাপ নেওয়া (Steam Inhalation) সাইনাসের অংশ শুকিয়ে গেলে সাইনাসের যন্ত্রণা শুরু হয়। তাই সাইনাসকে আর্দ্র রাখতে ভাপ নেওয়া যেতে পারে। আর তা সহজেই বাড়িতে করা যায়। ভাপ নিতে একটি পাত্রে গরম জল নিয়ে নিতে হবে। তার কিছুটা উপরে মুখ রেখে, মাথা ও পাত্র পর্দার মতো করে একটি মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একটি নাক থেকে শ্বাস নিয়ে অপরটি দিয়ে ছাড়তে হবে। এমন ২-৩ মিনিট ধরে করলে সাইনাস আর্দ্র হয়ে যাবে।
বিশ্রাম নিতে হবে- যদি খুব বেশি ব্যথা হয়, তাহলে শুধু ভালো করে বিশ্রাম নিলে ব্যথা সেরে যেতে পারে। ভালো করে ঘুমালেও অনেকসময় কাজ দেয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক দুই ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল আঙুলে নিয়ে নাকের গোড়ায় লাগিয়ে নিন। ঘুমনোর সময় এসি চালানোর অভ্যেস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে। প্রয়োজনে ঘুমের ঘণ্টা খানেক বা ঘণ্টা দেড়েক আগে এসি চালিয়ে নিয়ে ঘর ঠাণ্ডা করে তারপর ফ্যান চালিয়ে শুতে যান। মাথা যন্ত্রণা হলে গরম জলে নরম সুতির কাপড় ভিজিয়ে বার বার মাথায় দিন। কিছুটা আরাম পাবেন। ঘুমানোর সময় একটু বেশি উঁচুতে মাথা রেখে শুলে সাইনাস পরিষ্কার হতে সুবিধা হয়।
সারাদিন প্রচুর পরিমাণ জল খেতে হবে- প্রচুর পরিমাণ জল খেতে হবে। এতে অ্যাসিডিটি এড়ানো যাবে। অ্যাসিডিটি যত কমবে ততই কমবে মিউকাস। এক চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার, হাফ চামচ হলুদ, সামান্য আদা কুচি, পাতিলেবু, সামান্য গোলমরিচ, তিন চার কোয়া রসুন জলে ফেলে দিন। জল ফুটে গেলে সেই মিশ্রণ আসতে আসতে চুমুক দিয়ে খান। এতে মধুও দিতে পারেন। সাইনাসের সঙ্গে লড়তে এই দাওয়াই বেশ কাজের।
ভেপার নিতে হবে- ভেপার নিতে হবে। ধোঁয়া ওঠা ফুটন্ত গরম জলে এক-দু’ফোঁটা এসেনশিয়াল ইউক্যালিপটাস অয়েল ফেলে সেই জল ইনহেল করুন। এই সময়ে মাথা একটা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে নিলে পুরো বাষ্পটাই গিয়ে ধাক্কা মারবে জমে থাকা মিউকাসে। ফলে উপকার পাবেন তাড়াতাড়ি।