শিশুরা খানিকটা চঞ্চল হবে সেটাই স্বাভাবিক। বাড়ির খুদেরা হাসিখুশি, খেলাধুলোয় মগ্ন, দুরন্তপনা করছে মানেই সে সুস্থ। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে শিশু অতিরিক্ত চঞ্চল ও অমনোযোগী দেখা যায়। বিশেষ করে যখন তাদের এই অভ্যেসের জন্য তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখন এই সমস্যাকে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি)বলা হয়। এই এডিএইচডি(ADHD) শিশুর একধরনের স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা। সাধারণত তিন–চার বছর বয়সে শিশুর এই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।
আপনার সন্তানেরও যদি এই এডিএইচডির সমস্যা থাকে তা হলে দৈনন্দিন জীবনে, স্কুলে অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে তার সম্পর্কে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তাই চিকিত্সার পাশাপাশি নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় বেশ কিছু খাবার রাখলে এই ডিজঅর্ডার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যেমন-
১. শাক সবজি
এডিএইচডি-তে আক্রান্ত শিশু যদি নিয়মিত হাই আয়রন যুক্ত খাবার খায় তা হলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে এই সমস্যা। সে ক্ষেত্রে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় রকমারি শাক সবজি রাখলে উপকার পাবেন। বিশেষ করে ব্রোকোলি, পালং শাক, ফুলকপি, কালের মতো শাক সবজি রাখতে পারেন।
২. ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকোলেটে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। এই দুটি খনিজ উপাদান এডিএইচডি নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী।
৩. কলা
কলাতে প্রচুর পরিমাণ জিঙ্ক ও ম্যাগনেশিয়াম আছে। এই জিঙ্ক ডোপামাইন সহ শরীরের একাধিক নিউরোট্র্যান্সমিটারকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। এই কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খেলে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ হয় এবং ভাল ঘুম হয়।
৪. ডাল
ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। নিয়মিত হাই প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে একাগ্রতা বাড়ে। তাই নিরামিষাশিরা হাই প্রোটিন খাবার হিসেবে রকমারী ডাল খেতে পারেন। পাশাপাশি ডালের এত রকমের ভ্যারাইটি আছে যে রকমারি পদ তৈরি করা যায় বাচ্চাদের খেতে একঘেয়ে লাগে না।
৫. রকমারি বাদাম
যে সব পরিবারে আমিষ খাবার খাওয়ার চল নেই কিংবা সে যব বাচ্চারা মাছ মাংস খেতে পছন্দ করে না তাদের রকমারী বাদাম দিতে পারেন। বাদামে প্রচুর মাত্রায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 fatty acid) থাকে। এডিএইচডি নিয়ন্ত্রণে এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড(Omega-3 fatty acid) খুবই কার্যকরী।
৬. রকমারি বীজ
শুধু প্রোটিন নয় নানা রকমের ফল ও সবজির বীজে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়ামের মতো একাধিক খনিজ উপাদান থাকে। এগুলি স্মৃতিশক্তি, একাগ্রতা বাড়াতে ও মস্তিষ্কের সার্বিক বিকাশের জন্য খুবই কার্যকরী। আর এগুলো ব্যবহার করাও বেশ সহজ। স্যালাড, স্মুদি, ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন খেতে ভালই লাগে।এমনিক তরকারি বা স্যান্ডউইচের পুরের সঙ্গেও মেশাতে পারেন।
৭. টোফু
এডিএইচডি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাই প্রোটিন খাবার অত্যন্ত উপকারী। তবে একটানা একরকমের হাই প্রোটিন যুক্ত খাবার বাচ্চাদের দিলে তারা বিরক্ত হবে। খাবার নষ্ট করবে। ফলে পুষ্টি অধরা থেকে যেতে পারে। খাবারের একঘেয়েমি কাটাতে তাই নানা রকমের হাই প্রোটিন খাবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাচ্চাদের দিতে পারেন। খাবার খেতে ভাল লাগবে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি বাদ পড়বে না। এক্ষেত্রে টোফু খুবই কাজের।
৮. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোতে প্রচুর পরিমাণে হেলদি ফ্যাট রয়েছে। এই সব হেলদি ফ্যাটযুক্ত খাবার শরীরকে পুষ্টি শুষে নিতে সাহায্য করে।
৯. অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এডিএইচডি ম্যানেজমেন্ট মেডিকেশনে বিশেষ ওমেগা কমপউন্ড ভায়ারিন ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া অন্যান্য ভোজ্য তেলের তুলনায় রান্নার ক্ষেত্রে এই অলিভ অয়েল বেশি উপকারী।
১০. পোল্ট্রি
নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় আমিষ খাবারে যেমন মাছ মাংস রাখতে হবে। এই সব হাই প্রোটিন খাবার নিয়মিত খেলে শিশুর বুদ্ধির বিকাস হবে। একাগ্রতা বাড়বে এবং এই সব খাবার ওষুধের কার্যক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।