২০১৮ সালে রামনবমীর সশস্ত্র মিছিলে ন্যাজ-নাড়ানো হুপহাপ নম্পঝম্প দেখে বঙ্গীয় হিন্দুসমাজ যেন হঠাৎ করে বুকে বলভরসা পেল। ‘১৯-এ লোকসভা ভোটের আগে ফের হিন্দুত্বের ধ্বজা বের করে ‘চিড় কে ছাতি, বোলে আপনি পবনপুত্র হনুমান…’। অর্থাৎ স্বর্ণবঙ্গেও লাফিয়ে এল লেজে আগুন লাগা বজরঙ্গবলীর বাহিনী। সেই থেকে তাদের দাপাদাপি দেখে বাঙালি প্রথমে বিস্মিত হল। তারপর সোনার বাংলা ছারখার হওয়ার পথে দেখে রুখে দাঁড়াল। আর সে কারণে এখন হনু-বাবাজীবনকে মুখে ন্যাজ পুড়ে মুখপোড়া হতে হয়েছে।
লোকসভা ভোটের আগের দর্প ফল বেরনোর পর চূর্ণ হওয়ার দিন থেকে বিজেপির সিঁড়িভাঙা অঙ্কের শুরু। চলতি বছরে তো মোদির সুবর্ণ গোলক একেবারে লৌহগোলকে পরিণত হয়েছে। সোনাও লোহা হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ কী?
আরও পড়ুন : আফগানিস্তানে তালিবানরাজ
প্রথমত, হিন্দু ভোটকে বিজেপি টার্গেট করে নেওয়ায়, মুসলমানদের তৃণমূলে সম্পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন। দ্বিতীয়ত, এনআরসি নিয়ে তৃণমূলের প্রচারে মুসলমানদের ভরসা তৈরি। তৃতীয়ত, রাজ্যে মমতার অসংখ্য জনহিত ও উন্নয়ন কাজ। চতুর্থত, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের অপদার্থতা, অক্ষমতা ও বুদ্ধির পঙ্গুত্ব। সর্বোপরি, বাংলার রাজনীতিতে বাঙালি নেতার সবিশেষ অভাব। বিজেপির অন্দরে একজন বাঙালি জননেতার দৈন্য প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে। বিজেপি যে নকল বুঁদির গড় তৈরি করেছিল, তাতে কংক্রিটের মালমশলা কিছুই ছিল না। আর তাই এখন সহজেই এক-একটা ভোটে ধসে পড়ছে দেওয়াল। এমনকী পুরভোটে তো সিপিএমকেও পদ্মমধু সঞ্জীবনী দান করে গেল।
আরও পড়ুন : কো-তেই শাপমুক্তি!
বিধানসভা, চারটে উপনির্বাচন ও শেষে পুরভোটে বিজেপির পরাজয়কে তাই আস্ফালনের পরাজয় বলা যায়। আঞ্চলিকতাবাদের রাজনীতির, ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির আছাড় খেয়ে পড়া। বিজেপি ভুলে গেছে, সার্বভৌম রাজা রামের অশ্বমেধের ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরেছিল দুই শিশু। লব-কুশ।