দেবাশিস দাশগুপ্ত: মাত্র ১৬ দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। টম্যাটোর দাম বেড়েছে ওই সময়ের মধ্যে ৩৮ টাকা। এই তথ্য কেন্দ্রীয় খাদ্য, গণবণ্টন ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের। সর্ষের তেলের দামেও ঝাঁজ লেগেছে অনেক আগেই। অন্যান্য আনাজের দামও বেড়েছে বেশ খানিকটা। জ্বালানির দাম রোজ বাড়ছে। অনেক রাজ্যেই পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ১০০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছে। ডিজেলের দামও একশো ছুঁই ছুঁই।
আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের সেনা শিবিরে সরানোর নির্দেশিকা ভুয়ো, জানাল কাশ্মীর পুলিশ
এক কথায় দাম বাড়ছে সব কিছুরই। তার মধ্যে দেশে এবার বৃষ্টির পরিমাণও বেশি। তার ফলে প্রচুর ফসল জমিতে থেকে নষ্ট হচ্ছে। সেই কারণেও আনাজপাতির দাম বাড়ছে। জ্বালানির দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে পরিবহণের খরচও বেড়ে চলেছে। লরি, ট্রাক বা অন্য যে সব যানে আনাজ পরিবহণ করা হয়, তারও ভাড়া বাড়ছে। রান্নার গ্যাসের দাম প্রায় হাজার টাকা।
প্রশ্ন হল, এই অবস্থায় মানুষ কোথায় যাবে? গত প্রায় দু’বছর ধরে করোনার হামলায় গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত আর্থিক এবং সামাজিক দিক দিয়ে। আমাদের দেশও তার বাইরে নয়। বেকারি বেড়ে চলেছে হু হু করে। করোনা কালে কত মানুষ যে কাজ হারিয়েছে, কত মানুষের যে রোজগার তলানিতে এসে ঠেকেছে, তার ইয়ত্তা নেই। নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের সংসার চালানোই দায় হয়ে উঠেছে।
এই ব্যাপারে কেন্দ্রের কোনও হেলদোলও নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেবল বড় বড় ভাষণ দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি কত মহান, তাঁর নেতৃত্বে দেশ কত এগিয়ে চলেছে, নিজেই তার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মঞ্চে। বিজেপির অন্য নেতা-মন্ত্রীরা কেবল প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা গানে ব্যস্ত। এই লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে টুঁ শব্দটি শোনা যায় না কেন্দ্রের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের মুখে। আর দেশের মূল বিরোধী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের কথা যত কম বলা যায়, ততই ভালো। রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরা শুধু টুইটে বিরোধিতা করেই ক্ষান্ত থাকেন। মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুতে কোথায় রাস্তায় নেমে আন্দোলন কংগ্রেসের? শতাব্দী প্রাচীন এই দলটির হাল আজ খুবই খারাপ। প্রায় তিন বছর হতে চলল, কংগ্রেসের কোনও নির্বাচিত স্থায়ী সভাপতি নেই। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় চলছে এত বড় দলটা। তার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দল।
আরও পড়ুন: বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা হলেই জাতীয় নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা, কৃষকদের সর্তকবার্তা যোগীর পুলিশের
গত শনিবার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী শৃঙ্গলার উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছেন। সব ঠিক আছে। কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কোনও প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি। এমনকি এর বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের কর্মসূচিও নেওয়া হয়নি। ১৪ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত অবশ্য মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জন জাগরণ অভিযানের একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। তত দিনে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যাবে। আর ওই কর্মসূচি কতটা দাগ কাটতে পারবে সাধারণ মানুষের মধ্যে, তা নিয়েও সংশয় আছে।
অতএব, মোদ্দা কথা দাঁড়াল এই, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়তেই থাকবে। মানুষের সংসার চালানো দিনদিন কঠিন হয়ে পড়বে। কেন্দ্রীয় সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। ২০২৪ সালে আবার কী করে ক্ষমতায় থাকা যায়, তার ছক কষা হবে। দেশের মানুষ যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থাকবে। আর দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস শুধু টুইট রাজনীতি করে যাবে।