উখরা : দেবী দুর্গার আবির্ভাব নিয়ে প্রচুর অলৌকিক কাহিনি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম অন্ডালের উখরার ভট্টাচার্য বাড়ির ২৭০ বছরের খ্যাপা দুর্গার পুজো । কয়েক দশক আগে যখন বাংলায় রাজার শাসন ছিল সে সময় বর্ধমানের রাজার প্রধান পুরোহিত ছিলেন ভট্টাচার্য পরিবারের অষ্টম প্রজন্ম গঙ্গা নারায়ণ ভট্টাচার্য মহাশয়। কথিত আছে, সেই সময় রাজার সঙ্গে কোনও কারণে মনোমালিন্য হওয়ায় গঙ্গা নারায়ণ ভট্টাচার্য মহাশয় এই উখরা এলাকায় আসেন।
ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য মহাশয়া জানান ,তাঁদের অষ্টম প্রজন্ম গঙ্গানারায়ণ ভট্টাচার্য মহাশয় এখানে আসার পর কথিত আছে তিনি মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান। সেখানে মা দুর্গা একটা গাছের নিচে মাকে পাওয়ার কথা বলেন। মায়ের আদেশ মতো গঙ্গারামবাবু সেই গাছতলায় গিয়ে মায়ের দেখা পান। এবং মা দর্শন দিয়ে গঙ্গারাম বাবুকে বলেন তিনি খ্যাপা মা রূপে ভট্টাচার্য পরিবারে পূজিত হতে চান। তারপর থেকেই শুরু হয় খ্যাপা মায়ের পুজো।
আরও পড়ুন : ‘উমা আসছে’,এবার মণ্ডপে বাজবে পুজোর গান
ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো
তবে এই খ্যাপা মা সম্পর্কে অনেক অলৌকিক কাহিনিও শোনা যায়। শোনা যায়, হঠাৎ একদিন এক শাঁখারি ভট্টাচার্য বাবুকে এসে বলেন তাঁর মেয়ে শাঁখা পরেছে। শাঁখার দাম দিতে হবে। অবাক হয়ে ভট্টাচার্য বাবু শাঁখারিকে বলেন, তিনি বিয়েই করেননি তার মেয়ে এল কোথা থেকে। তাহলে কে শাখা পরলো ? শাঁখারি ভট্টাচার্য মহাশয়কে একটা পুকুরের কাছে নিয়ে গিয়ে দেখান এখানেই তাঁর মেয়ে শাঁখা পরেছে। পণ্ডিত ভট্টাচার্য মহাশয় বুঝতে পারেন এটা নিশ্চয়ই মা দুর্গার ছলনা । তিনি কাতর কন্ঠে মাকে ডাকতে শুরু করেন। হঠাৎ সেই মুহূর্তেই জল থেকে ছোট্ট ছোট্ট দুটো শাঁখা পরা হাত বেরিয়ে আসে। মা প্রমাণ দেন তিনি কন্যা রূপে শাঁখারীর থেকে শাঁখা পরেছেন। আর তারপর থেকেই এই খ্যাপা মা দুর্গার দশটি হাতের মধ্যে দুটি হাত বড় , বাকি আটটি হাত ছোট ছোট। এ রকম দুর্গা এই পশ্চিম বর্ধমান ছাড়া আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। এমনটাই জানান, ভট্টাচার্য পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম শর্মিষ্ঠা দেবী। এছাড়াও আরও এক অলৌকিক কাহিনির সাক্ষী এই ভট্টাচার্য পরিবার।
এসব কিছু সত্ত্বেও অন্যান্য দুর্গার মতো ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গাও জাঁকজমকের সঙ্গে পূজিত হন। এই ভট্টাচার্য পরিবারে বোধনের দিন থেকেই মায়ের পুজো শুরু হয়ে যায় । ভট্টাচার্য পরিবারের একেবারে কনিষ্ঠ প্রজন্ম আর্যবি ভট্টাচার্য জানান ,বাড়ির পুজো ক’দিন তারা বাড়ি থেকে বেরোতেই চান না। তাই ঘরের পুজোয় ঘরেই থাকার যে আনন্দ সেটাতেই তারা খুশি।