তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বেড়েই চলেছে। বুধবার দিল্লিতে কংগ্রেস সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করার প্রশ্নে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee) যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাতে দুই দলের সম্পর্কের শেষ সুতোটাও বোধ হয় ছেঁড়ার অপেক্ষায়। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের দৈনিক মুখপত্র জাগো বাংলায় ফের কংগ্রেসকে(Congress) আক্রমণ করা হয়েছে তীব্র ভাষায়। বিশেষ করে অধীর চৌধুরীকে জাগো বাংলা আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। এর পর জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট গড়া কতটা সম্ভব, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলায় বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে দুরমুস করার পর তৃণমূল যেন আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তাদের মূল টার্গেট এখন কংগ্রেস।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অনেক আগেই অভিযোগ করেন, কংগ্রেসকে ভাঙার জন্য তৃণমূল উঠেপড়ে লেগেছে। তারা বিজেপির সুপারি নিয়েছে। অধীরের মতো আর কোনও কংগ্রেস নেতা এই ভাষায় তৃণমুলকে আক্রমণ করেননি। তাই তৃণমূলও অধীরকে টার্গেট করেছে। জাগো বাংলার সম্পাদকীয়তে বৃহস্পতিবার লেখা হয়েছে, কংগ্রেস বেজায় মুশকিলে পড়েছে। নতুন কেউ তৃণমূলে যোগ দিলে কংগ্রেসের বুকের ভিতর হাহাকারের বাদ্যি বেজে ওঠে। অধীর চৌধুরীর জ্বালাটা যেন একটু বেশি। তিনি এখন অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছেন। অধীর বাংলায় কংগ্রেসকে শূন্যে টেনে নামিয়েছেন। জোট-ঘোঁট করে দলটাকে তুলে দেওয়ার জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। বিজেপি বিরোধিতার ক্ষেত্রে কংগ্রেস তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
জাগো বাংলার সম্পাদকীয়তে মন্তব্য, জাতীয় স্তরে কংগ্রেসকে সঙ্গে রেখেই চলতে চান মমতা ব্যানার্জি। তিনি স্টিয়ারিং কমিটি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস তা কানে তোলেনি। তৃণমূল কি অন্যের উপর ভরসা করে বসে থাকবে? তৃণমূলের বক্তব্য, তৃণমূল যখন রাস্তায়, তখন কংগ্রেস ঠান্ডা ঘরে বসে টুইটে ব্যস্ত। সব দলই সংগঠন বাড়াতে চায়। শক্তি বাড়াতে চায়। এতে শূন্যে নামা অধীরদের গাত্রদাহ হলে কিছু করার নেই। জাগো বাংলায় কংগ্রেসকে ব্যর্থ ও অপদার্থ বলতেও ছাড়েনি। মুখপত্রের মন্তব্য, তৃণমূলকে কটাক্ষ এখন অক্ষমের লজ্জা ঢাকার শেষ বস্ত্রখণ্ড।
আরও পড়ুন – Adhir Chowdhury: মোদিকে খুশি করতেই সনিয়াকে এড়ালেন মমতা, কটাক্ষ অধীরের
বুধবার দিল্লিতে তৃণমূল নেত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তাঁর কোনও বৈঠক হবে কি না। মমতা বলেন, দিল্লিতে এলেই কংগ্রেস নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে নাকি? এরকম কোনও বাধ্যবাধ্যবাধকতা আছে নাকি? অধীরের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মমতার প্রতিক্রিয়া, আমাদের ব্লক স্তরের কোনও নেতাকে জিজ্ঞাসা করুন।
বস্তুত রাজ্য বিধানসভার ভোটের পর থেকেই তৃণমূল মমতাকে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রধান মুখ হিসেবে দেখাতে চাইছে। গোয়া, মেঘালয়, ত্রিপুরায় তৃণমূলের শাখা তৈরি। মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ১২ জন কংগ্রেস বিধায়ককে নিয়ে বৃহস্পতিবার তৃণমূলে যোগ দেন। এখন ওই পাহাড়ি দেশে তৃণমূলই প্রধান বিরোধী দল। ত্রিপুরার পুরভোটে তৃণমূল আজ লড়াই করছে সব আসনে। হরিয়ানার প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি অশোক তানোয়ার, বিহারের কংগ্রেস নেতা কীর্তি আজাদ, প্রাক্তন জেডিইউ নেতা পবন ভার্মা মঙ্গলবার নেত্রীর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে পরিষ্কার, তৃণমূল জাতীয় স্তরে দ্রুত সংগঠন গড়তে চাইছে। মমতাকে প্রধান বিরোধী মুখ হিসেবে দেখাতে চাইছে। বৃহস্পতিবারই মমতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ফিরহাদ হাকিম স্পষ্ট বলেন, মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল অচিরেই কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসবে। পরে তৃণমূল কেন্দ্রের শাসক দল হবে। ইঙ্গিত স্পষ্ট। এসবের মধ্যেই যত দিন যাচ্ছে, ততই তৃণমূল আর কংগ্রেসের মধ্যে তিক্ততা বাড়ছে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে দেশে বিজেপি বিরোধী জোট গঠন কি বিরাট প্রশ্নের মুখে? অন্তত এই দুই দলের সমীকরণ সেটাই প্রমাণ করছে। ইতিমধ্যে তৃণমূল দাবি করেছে, তারাই আসল কংগ্রেস।