গণহত্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বেরোতে পারছে না। রামপুরহাটে একদল হিংস্র গরিব মানুষ আরেকটি গরিব পরিবারের নারী, শিশুদের পুড়িয়ে মারল৷ মনে হয় গত ৭৫ বছরে শাসকদলের রাজনীতি বাঙালির ডিএনএ-তে বড় কোনও গোলমাল ঘটিয়ে ফেলেছে। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলছে, গণহত্যা বা জেনোসাইড হল ‘The deliberate and systematic destruction of a group of people because of their ethnicity, nationality, religion, or race. The term, derived from the Greek genos (“race,” “tribe,” or “nation”) and the Latin cide (“killing”), was coined by Raphael Lemkin, a Polish-born jurist who served as an adviser to the U.S. Department of War during World War II.
সেই অর্থে ২০০২-এ গুজরাত গণহত্যা বা জেনোসাইড হয়েছে, ১৯৮৪-তে দিল্লিতে, ১৯৮৩-তে অসমের নেলিতে গণহত্যা হয়েছে। এরকম উদাহরণ ভারতে আরও অসংখ্য আছে। পশ্চিমবঙ্গে কাশীপুর-বরাহনগর গণহত্যার এখনও কোনও বিচার হয়নি। এর পর সিপিএম আমলে মরিচঝাঁপি, আনন্দমার্গী হত্যার ঘটনা ছাড়িয়ে ছোট আঙারিয়া, নানুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই। এবার রামপুরহাট। একের পর এক গণহত্যার ঘটনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীদের শাস্তি হয়নি। শাস্তি হয় না৷ কারণ, হত্যাকারীরা শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত। এই রক্তপাতের রাজনীতি থেকে বাংলার রাজনীতি বেরোতে পারছে না। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক ছাত্রনেতা আনিস খুন থেকে পানিহাটি, ঝালদা, তার পর রামপুরহাট। অভিযোগের আঙুল প্রতিটি ক্ষেত্রে শাসকদলের দিকে। ষড়যন্ত্র, ‘লারজার কনস্পিরেসি’ বলে যাঁরা নিজেদের দিকে তাকাতে চাইছেন না, তাঁরা মনে রাখবেন, চোখ বন্ধ করে রাখলে প্রলয় থেমে যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি অস্ত্রমুক্ত বাংলা উপহার দেবেন। সে কাজ কিন্তু ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী বোমায় আক্রান্ত হয়েছেন মুর্শিদাবাদে। দক্ষিণ ২৪ পরগণা সহ বেশ কিছু জেলায় তৃণমূলের দু’পক্ষের মধ্যে মার-দাঙ্গা হয়েছে। ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে কারও শাস্তি হয়নি। প্রায় প্রতিটি ঘটনায় গুরুতর অভিযোগ উঠছে পুলিসের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠছে পুলিসেকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহারের। আর কে না জানে তুলনায় কম দক্ষ, কম যোগ্য পুলিসই শাসকদলের পেয়ারের হয়ে উঠতে ব্যস্ত থাকেন। এর ফলে, আজ পুলিস মুখ্যমন্ত্রীকে মা বলছেন, কাল তাঁকেই দেখা যায় আরও সুযোগ সুবিধার লোভে বিরোধীদলের প্রার্থী হতে। ২০০৩-এর রক্তাক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন আমাদের মনে আছে। ভোটের আগে পরে প্রায় একশো জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৮তে দেখা গেছে রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড়িয়ে থাকতে। ফল, ৩৪ শতাংশ আনকন্টেস্টেড এবং ২০১৯-এ বিজেপির বিপুল সাফল্য। সামনের বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন আসছে। এখন থেকে সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস যখন রাজ্যের বাইরে পা রাখার কথা ভাবছে, তখন সারা দেশের সামনে সুশাসনের একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরা খুব জরুরি। উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে তুলনা করে বুক ফোলানোর থেকে, মেনে নেওয়া উচিত, গত ১১ বছরে কিন্তু সে কাজ কিছুই প্রায় হয়নি।
পুড়ে খাক বাড়ি-ঘর।
কেন একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে? রোয়ান্ডা গণ হত্যা নিয়ে বই লিখেছেন ‘গুড মুসলিম ব্যাড মুসলিম’ বইয়ের লেখক মাহমুদ মামদানি। তিনি একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন, ‘ক্রিমিনাল পপুলেশন’। এই ক্রিমিলাল পপুলেশন তৈরি করে শাসকদল। বাঙালিকে গত ৭৫ বছরে বিভিন্ন শাসকদল কি সেই দিকেই ঠেলে দিচ্ছে? আমাদের গভীর ভাবে ভাববার সময় এসেছে। ষড়যন্ত্র বলে এইসব ঘটনাকে দূরে সরিয়ে রাখার সময় এটা নয়।
আগুন নিয়নিন্ত্রণে এলেও ধোঁয়া উঠছে।
কেন এই ধরনের রাজনৈতিক খুন হচ্ছে? এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই এই সব ঘটনার ৯৯ শতাংশের পিছনে আছে আর্থিক ভাগাভাগীর লড়াই। শুধু মুখে নয়, সরকারকে শক্ত ভাষায় প্রমাণ দিতে হবে তারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর। যে নেতা বলেন সিন্ডিকেট বন্ধ করলে সরকার পড়ে যাবে, এই কথা বলে বলে সসম্মানে বিজেপিতে চলে যান, তার পর আবার হেরে গিয়ে তৃণমূলে ফিরে এসে বড় পদ পেয়ে যান, এই দৃষ্টান্ত দুষ্কর্মকে উৎসাহিত করতেই পারে। তৃণমূল দলে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত একটা সংশোধনী প্রক্রিয়া চালু হওয়া দরকার। বেনো জল বের করে দেওয়ার এটাই সময়। মানুষ অনেক স্বপ্ন নিয়ে তৃণমূলকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। সেটা যেন নেতা-মন্ত্রীরা ভুলে না যান।