জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার দিনেই দেশবাসীর চোখ ধুয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। সকালে ঘুমচোখ ভাঙতেই দেশবাসী দেখল প্রধানমন্ত্রীর এপ্রিল ফুল টুইট। জগন্নাথের ১০৮ ঘড়া জল নয়, একেবারে ১০ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতির সাগরে ভাসিয়ে দিলেন রাজ-জ্যোতিষী। যিনি শুভদিনক্ষণ দেখে, গ্রহনক্ষত্রের অবস্থান জেনে এমন ঘোষণা করলেন, যা মিলতেও পারে, আবার নাও মিলতে পারে। এ যেন ফুটপাতে বসা টিয়া পাখির ভবিষ্যদ্বাণী। এখন ভরসা বেকারদের ললাটে কী লেখা আছে, তার উপর। যদিও আপাতত দেড় বছর ধরে মোদি সরকারের প্রচারপুস্তিকার মলাটে এই রঙিন ছবিটাই জ্বলজ্বল করবে। দেড় বছরের সোনার ফসল ঘরে উঠবে ঠিক ২ বছরের মাথায়, ২০২৪ সালে।
অনেকের মনে আছে, হয়তো অনেকের নেই— ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর আগ্রার এক জনসভা। নমো বলেছিলেন, যদি আমাদের সরকার জিতে ক্ষমতায় আসে, তাহলে প্রতিবছর ১ কোটি চাকরি হবে। তারপর কেটে গিয়েছে ৯ বছর। কেন্দ্রীয় সরকারে কটা চাকরি হয়েছে তার জবাব দেবেন কি প্রধানমন্ত্রী! এমনিতেই কোভিডের কারণে গত ২ বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ। দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। কিন্তু নিয়োগ বন্ধ। কারণ, সরকারের বেতন দেওয়ার রেস্ত নেই। রাস্তায় রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে পিএইচডি। আর প্রধানমন্ত্রী চাষি-শ্রমিকের ছেলেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী করার মহাকাশীয় স্বপ্নে বুঁদ করে রাখছেন। মোদিজি আমরা দেশবাসী বোকা হতে পারি, কিন্তু বৃহত্তর অর্থে বোকাছেলে নই। আপনার টিয়াপাখির খেল কাজে আসবে না। বরং, আগামী দেড় বছরে আপনার সেই ঝোলা গুছিয়ে রাখাই ভালো। হিমালয়ের গুহা অপেক্ষা করে আছে, এবার আর ক্যামেরা থাকবে না।
আর একটি দৃষ্টান্ত দিই। ২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তি। রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড (RRB) গ্রুপ ডি পদে নিয়োগের চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। শূন্যপদের সংখ্যা ছিল সে সময়েই ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭৬৯। গত ৪ বছরেও সেই পরীক্ষা হয়নি। ফর্মের জন্য টাকা নেওয়া হয়েছিল ২০০-৫০০। ফর্ম জমা পড়েছিল দেড় কোটির উপর। অর্থাৎ ফর্ম বাবদ বোর্ডের আয় হয়েছিল ৫০০ কোটি টাকার মতো। সেই চাকরির কী হল মোদিবাবু? শুধু তাই নয়, এই চাকরির মধ্যে সেনা, বায়ু ও নৌবাহিনীর চাকরি কি থাকছে! ২ বছর ধরে এই তিন বাহিনীতেও নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। যে সরকার একের পর এক সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় ঝাঁপ বন্ধ করছে, তারা হঠাৎ চাকরি দিতে চাইছে কেন? প্রশ্ন তো উঠবেই। যে চৌকিদার বছরে কোটি চাকরির মোয়া খাইছেন, তিনি যদি দেড় বছরে মাত্র ১০ লক্ষ চাকরির কথা বলেন তাহলে তাঁর সত্যনিষ্ঠা নিয়ে চোরের সাক্ষীও লজ্জা পেতে পারে।
আরও পড়ুন: Abhijit Gangopadhyay: এর থেকে সিটই ভালো, সিবিআই সম্পর্কে হতাশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
আসলে ২০২৪ সালের ভোটে চাকরির টোপ ফেলে রাঘববোয়াল মারতে চাইছেন মোদি। এই অন্তর্বর্তী সময়ে দেশের বেকার যুবকদের অর্থাৎ তাঁদের পরিবারকে চোখে পট্টি পরিয়ে রাখতে চাইছেন তিনি। ১০ লক্ষ চাকরির অর্থ— এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ চাকরি যাবে সংরক্ষণের আওতায়। বাকিটা পাবেন সাধারণ ক্যাটেগরিতে। মোট উপকৃতের সংখ্যা পরিবারপিছু ৫ জন ধরলে ৫০ লক্ষ পরিবার। মোদি এই দাঁওটাই মারতে চাইছেন। কিন্তু কী লাভ? একটি হিসেবে দেখা যাচ্ছে, ভারতে প্রায় ১০০ কোটি ভোটার রয়েছেন। যার প্রায় ৬৭ শতাংশ ভোট দেন। আর ২০২১ সাল পর্যন্ত হিসেবে শহর এলাকায় বেকারের হার ২৬ শতাংশ। প্রায় ৩১ কোটির উপরে। সুতরাং, বারাণসীর গঙ্গাঘাটে যেমন করাঞ্জলি করা হয় গঙ্গাজলেই। মোদির এই চাকরির ভাঁওতাও তেমনই তাঁর পকেটেই ঢুকবে। এর থেকে বেশি খারাপ কথা কি আর লেখা যায়!