Placeholder canvas
কলকাতা রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ |
K:T:V Clock
কথা বলার সুযোগটুকুও পেলাম না
সুমন চট্টোপাধ্যায়, বিশিষ্ট সাংবাদিক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১, ০৬:৫৫:২১ পিএম
  • / ৪৫০ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে গত তিন বছর আমার কোনও যোগাযোগই ছিল না। তিনি বিলক্ষণ জানতেন, ভয়ঙ্কর দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হচ্ছে। তবু তাঁর কাছ থেকে একটি টেলিফোনও আসেনি। না আমার কাছে, না আমার গিন্নির কাছে। সত্যের খাতিরে কবুল করে রাখি, কোনও দলের কোনও রাজনীতিক, ছোট-বড়-মাঝারি, এই সময়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি, এখনও রাখেন না। আমার তরফ থেকে আমিও কোনও উদ্যোগ নিইনি, নেওয়ার ইচ্ছে অথবা পরিকল্পনাও নেই। রাজনীতিকদের একটি বড় চরিত্র-লক্ষণ হল তাঁরা কেবলই ব্যক্তিগত স্বার্থের মানদণ্ডে সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা অথবা অপ্রয়োজনীয়তা বিচার করেন। ফলে একদা যাঁরা স্লিপ লিখে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য ধৈর্যের পরীক্ষা দিতেন, বা তাঁদের নামে দু’কলম লিখে দেওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করতেন, বা দিনে চারবার টেলিফোন করতেন পীরিতি দেখাতে, বা প্রতি পুজোয় উপঢৌকন পাঠাতেন, তাঁদের কারও কাছে এই ক্ষমতাহীন বৃদ্ধের আর কোনও মূল্য নেই। তাঁদের কাছে আমি এখন ‘কনডেমড ক্লোজড চ্যাপ্টার’।

এটাই স্বাভাবিক, সংসার এই নিয়মেই চলে। আমার মতো এমন ভবিতব্য আরও অনেকের ক্ষেত্রেই সত্য। তবে রাজনীতির সঙ্গে অঘোষিত বিচ্ছেদের কারণে আমার বড্ড দুঃখে দিন কাটছে এমন নয়। নিজেকে বেশ নির্ভারই লাগছে। তাছাড়া যে মাপের শ্রদ্ধেয় রাজনীতিকদের সঙ্গে ওঠা-বসা করে আমরা দীর্ঘকাল সাংবাদিকতা করেছি, তাঁদের পাশে আজকের রাজনীতিকদের বামনের চেয়েও ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। মনে হয় এঁদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখাটাই শরীর ও মনের পক্ষে হিতকারী। ‘পয়দা হি কেবলম’ মন্ত্র-শাসিত রাজনীতিতে আমার আধ-ছটাক ‘দিলচসপিও’ নেই।

এত লোকের মধ্যে আমার নিদারুণ অভিমান হয়েছিল কেবল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উপর। কাউকে একান্ত আপন ভাবলে যেমনটা হয় আর কী। ভুবনেশ্বর থেকে আমি কলকাতায় ফিরেছি, তাও পনেরো মাস হয়ে গেল। অনেকবার মনে হয়েছে সুব্রত’দাকে একটা টেলিফোন করি। তীব্র অভিমান আমাকে বাধা দিয়েছে। আজ হঠাৎ সুব্রতদা চলে যাওয়ার পরে এ জন্য বেশ অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে। দেখা তো হলই না, বুকটা হাল্কা করার সুযোগও ফস্কে গেল।

খুব মোটা দাগে বিচার করলে সুব্রতদার রাজনৈতিক জীবনকে দু’টি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্বটির সমাপ্তি ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুতে, দ্বিতীয় পর্বের সূচনা তার পর থেকে। প্রথম পর্বে তুঙ্গে বৃহস্পতি নিয়ে দামাল রাজনীতি করেছেন সুব্রত, সংগঠক এবং অ্যাজিটেসনিস্ট দু’টি ক্ষেত্রেই সুনাম কুড়িয়েছেন। সে সময়ে প্রিয়-সুব্রত জুটির যুগলবন্দিকে অগ্রাহ্য করে বাংলার রাজনীতির ইতিহাস লেখাই যাবে না। জরুরি অবস্থার পরে কংগ্রেস যখন ভাঙছে, সুব্রত রীতিমতো ধর্ম-সঙ্কটে পড়ে গিয়েছিলেন। একদিকে তাঁর প্রাণের নেতা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি, অন্যদিকে আরাধ্যা নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সে সব দিনের কথা স্মরণ করে সুব্রতদা আমাকে বলেছিলেন, ‘তখন আমি রাতের পর রাত ঘুমোতে পারিনি, প্রিয়দাকে কথা দিয়ে ফেলেছি ওঁর সঙ্গে থাকব, অন্যদিকে ইন্দিরাজির ডাকও উপেক্ষা করতে পারছি না। অনেক ভাবনা চিন্তার পরে স্থির করলাম ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গেই থাকি।’

সুব্রতদার কাছে জীবনের কঠিনতম প্রশ্নটি ছিল ইন্দিরা আর প্রিয়র মধ্যে কার প্রতি তাঁর দুর্বলতা বেশি ছিল। তিনি আমতা আমতা করতেন, প্রত্যয়ের সঙ্গে জবাব দিতে পারতেন না। প্রিয়বাবুর মৃত্যুর পরে সখেদে বলেছিলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী নেই, প্রিয়দা’টাও চলে গেল, রাজনীতি করার মজাটাই চলে গেল।’

সুব্রতবাবুর রাজনৈতিক জীবনের দ্বিতীয় পর্বটি বেশ এলোমেলো, নানা রকম চড়াই-উতরাই, দলবদল, অনিশ্চয়তায় ভরা। এই পর্বে তিনি যে সসম্মানে টিকে থাকতে পেরেছেন, তা একেবারেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে। একটা সময় ছিল যখন সুব্রতবাবু রোজ বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে মমতাকে গাল পাড়তেন, আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করতাম এমনিতে অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর মমতা শত প্ররোচনাতেও সুব্রতবাবুর কটূ মন্তব্যের কোনও জবাব দিতেন না। তাঁর ভাবখানা ছিল এই রকম- সুব্রতদা বলেছেন তো, ও সব গায়ে মাখার কোনও প্রয়োজন নেই।

সাম্প্রতিক আরও একটি ঘটনার কথা বলা যাক। দার্জিলিং সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, সঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সিঁড়ি ভেঙে মন্দিরে ওঠার পথে সুব্রতবাবু হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন, যায় যায় অবস্থা। কালবিলম্ব না করে সুব্রতবাবুকে ফিরিয়ে আনা হল কলকাতায়, মুখ্যমন্ত্রীও এলেন। এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে সুব্রতদা আমায় খুব আবেগ-তাড়িত গলায় বলেছিলেন, ‘প্লেনে পুরোটা সময় মমতা আমার পা ম্যাসাজ করতে করতে এলো। কত বারণ করলাম, শুনল না। হাজার হোক সে তো একজন মুখ্যমন্ত্রী।’

প্রিয়-সুব্রত সম্পর্কের রসায়ন আমরা অনেকটাই জানি, কিন্তু মমতা-সুব্রতর সম্পর্কের রসায়ন এখনও অনেকটাই অনাবিষ্কৃত। মমতা যখন ছাত্র-রাজনীতি করেন তাঁর গুরু ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কোনও একটি ছাত্র-যুব প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে মমতাকে প্রথম বিদেশে পাঠিয়েছিলেন সুব্রত। সুব্রতবাবু দাবি করতেন, ১৯৮৪-র লোকসভা ভোটে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে মমতা নাকি কংগ্রেসের প্রতীক পেয়েছিলেন তাঁরই সৌজন্যে। যদিও এ নিয়ে ভিন্ন মতও আমি শুনেছি। ফলে সুব্রত-মমতার মধ্যে গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছিল প্রশ্নাতীত।

কিন্তু রাজনীতি এমনই বিষম বস্তু যেখানে কৃতজ্ঞতাবোধ একেবারেই গুরুত্বহীন, নিজের স্বার্থটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় সমর্থন না করলে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রথম দফায় রাজ্যসভায় যেতেই পারতেন না। তা নিয়ে প্রণববাবুর কোনও কৃতজ্ঞতা ছিল কি? ইচ্ছে করলে এমন ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়, কিন্তু তালিকা দীর্ঘতর করে লাভ কী?

বামফ্রন্টকে হটিয়ে তৃণমূলের সামনে যখন কলকাতা পুরসভা গঠনের সুযোগ এল, তখন মমতা দলে ঘনিষ্ঠ কাউকে নয় মেয়রের দায়িত্ব তুলে দিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাতে। সম্ভবত সুব্রতবাবু তখন তৃণমূলের সদস্যও নন। সুরসিক সুব্রতবাবু তখন প্রায়শই রসিকতা করে বলতেন, ‘আমার দুরবস্থাটা তোমরা বুঝতে পারছ? মাথার ওপর মমতা, নীচে ১০ হাজার ধাঙড়।’ মমতার তিনটি মন্ত্রিসভাতেই জায়গা পেয়েছেন সুব্রতবাবু, গুরুত্ব কতটা পেয়েছেন গবেষণার বিষয়।

যে কাজটিতে সুব্রত মুখোপাধ্যায় সক্কলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন সেটা তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা। অতি অল্প বয়সে, ১৯৭১ সালে সিদ্ধার্থ রায় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছিলেন সুব্রত। তাও আবার স্বরাষ্ট্র ও তথ্য-জনসংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের। একটা উত্তাল সময়ে প্রশাসন চালানোয় সেই তাঁর হাতেখড়ি। কলকাতা পুরসভার মেয়র হিসেবে তাঁর কীর্তি আজও লোকে অকুণ্ঠ ভাবে স্বীকার করে। তৃণমূল সরকারের পঞ্চায়েত মন্ত্রী হিসেবেও তিনি বরাবর ফুল মার্কস পেয়ে এসেছেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয় রাজ্যে সাম্প্রতিক কালের অ-বাম রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতম ব্যক্তি ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যদিও রাজনীতিতে প্রাপ্তির একমাত্র মাপকাঠি যোগ্যতা হয় না বরং বেশি যোগ্য হলে হিতে বিপরীতও হয়ে যেতে পারে!

(লেখকের ব্লগ থেকে অনুমতি নিয়ে লেখাটি হুবহু প্রকাশ করা হল)

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

কালীপুজোর আগে বাংলাজুড়ে মেঘলা আকাশ ! কী বলছে হাওয়া অফিস?
রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
উত্তরবঙ্গে ফের বিজেপি সাংসদের উপর হামলা, এবার টার্গেট রাজু !
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
দেড় কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির অভিযোগ, জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিল ইডি
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই গোর্খা ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ! মোদিকে কড়া চিঠি মমতার
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জয় মোহনবাগানের
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
শিমুরালির এই জনপ্রিয় কালীপুজোর রীতি জানলে চমকে যাবেন, জানুন ৪০০ বছর আগের ইতিহাস
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
সতীর অভিশাপ! অদ্ভুত কারণে এই গ্রামে আজও পালিত হয় না দীপাবলি
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
কালীপুজোর চাঁদার টাকায় চলছিল দেদার মদ্যপান! হাতেনাতে ধরতেই কী হল?
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
মহারাষ্ট্রে পুণ্যার্থী বোঝাই গাড়ি পড়ল খাদে! মৃত ৮
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
পার্থ ম্যাচে ভারতের সম্ভাব্য একাদশ কী? দেখে নিন
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
৫৬তম বর্ষে কৃষ্ণনগরের ক্লাব সাথীর শ্যামাপুজোয় এবছরের ভাবনা মায়ানমারের বৌদ্ধ মন্দির
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
টানা ১৩৬ দিন উঠবে না সূর্য! পৃথিবীতে কি সত্যিই নেমে এল অন্ধকার যুগ?
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
দীপাবলির দিন শেয়ার বাজারে হবে মুহুরৎ ট্রেডিং! কী এটি?
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
কালীপুজোর রাতে আরাধ্য অলক্ষ্মী! ঘটিবাড়ির প্রাচীন রীতিতে কেন বিদায় দেওয়া হয় দেবীকে?
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
‘আত্মনির্ভরতা’র উপর জোর, ভারতেই তৈরি হচ্ছে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন!
শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team