রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদের এক জন, পেরারিভালনকে ৩১ বছর পর মুক্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট। মনে পড়ছে বছর দুই আগে পড়া একটা বইয়ের কথা। আমেরিকা-নিবাসী দুই তরুণ লেখক প্রদীপ চিব্বার এবং হর্ষ শাহের নেওয়া সাক্ষাৎকারের সংকলন। নাম ‘ইন্ডিয়া টুমরো’। সেই সাক্ষাৎকার থেকেই প্রথম জানা গিয়েছিল প্রিয়াঙ্কা গান্ধী স্মৃতিকথা লিখেছেন। যার প্রধান বিষয়, বাবা রাজীব গান্ধীর মৃত্যু এবং জেলে তাঁর বাবার হত্যাকারীদের মধ্যে একজনের সঙ্গে তাঁর কথা-বার্তা। সেই বন্দি, নলিনী শ্রীহরণ, সম্ভবত পৃথিবীর সব থেকে বেশী সময়ের একজন নারী-বন্দি। ‘ইন্ডিয়া টুমোরো’ তে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, ২০০৮ সালে ভেলোরের কারাগারে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা নলিনীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘আমার বাবা তো একজন ভালো মানুষ ছিলেন, তোমরা তাঁকে মারলে কেন?’ পরে নলিনী জেল থেকে সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক লিখিত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সেদিন প্রিয়াঙ্কার কথা শুনে আমার এত কষ্ট হয়েছিল যে আমরা দু’জনেই অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম। এই বইয়ে, প্রিয়াঙ্কার দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটিই সেরা সাক্ষাৎকার।
ছোটবেলা, বাবার স্মৃতি, হতাশা, একাকিত্ব, সন্তানদের উপর নানা ‘অপপ্রচার’-এর প্রভাব, হেন বিষয় নেই যা নিয়ে তিনি কথা বলেননি। অপপ্রচার প্রসঙ্গে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘আমার দিদা (সোনিয়া গান্ধীর মা), রান্না-বান্না, ঘরের কাজ, জামা-কাপড় ইস্তিরি করা, এইসব নিয়ে সারা দিন ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন। অথচ ইন্টারনেট খুললে পাওয়া যাবে, তিনি নাকি একজন কেজিবির ‘স্পাই’, ভারত থেকে প্রাচীন মূর্তি পাচারের কাজে যুক্ত। আমরা সবাই মিলে মাঝে মাঝে ইন্টারনেট খুলে এসব দেখি আর আমাদের দিদা কেজিবি-র লোকেদের সঙ্গে রাশিয়ান ভাষায় কথা বলছেন বা তিনি চুপি চুপি মূর্তি চুরি করছেন, সেই ছবিগুলো কল্পনা করি আর হাসাহাসি করি’।আজও পেরারিভালনএর মুক্তির খবর প্রচারিত হওয়ার পর নেহরু-গান্ধী পরিবারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁরা ওই অপরাধীদের ক্ষমা করেছেন। দেশের একজন প্রধানমন্ত্রীর হত্যাকরীদের মুক্তি দিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া, এটা বোধহয় ভারতেই সম্ভব। ত্রিশূল, লাভজিহাদ, বুলডোজারের বিপরীতে এও এক নজির যা আশা জাগায়।
এবার কংগ্রেসের কথা। পাঞ্জাবে সুনীল জাখরের পর গুজরাতে কংগ্রেস ছাড়লেন হার্দিক প্যাটেল। গত ১৩ থেকে ১৫ মে উদয়পুরে কংগ্রেস যখন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার, তার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দল থেকে নেতাদের পদত্যাগ বুঝিয়ে দিচ্ছে সোনিয়া রাহুলকে ভারত জোড়ো-র আগে কংগ্রেসকে কী করে জোড়া যায় তা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে। সামনেই গুজরাত এবং হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। এবার কেজরিওয়ালের আপ-ও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী। এই দুই রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান রক্ষা করাই কংগ্রেসের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। তার পর ২০২৩-এর জানুয়ারিতে রাজস্থানের ভোট, ডিসেম্বরে ছত্তিশগড়ের ভোট। কংগ্রেসের হাতে সময় কিন্তু খুবই কম। সামনের অগস্ট-সেপ্টেম্বরে দলের সভাপতি নির্বাচন। রাজস্থানে এবং ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস যদি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে তো ভালো আর যদি এই দুই রাজ্যের একটি বা দুটি-ই হাতছাড়া হয়, সেক্ষেত্রে কংগ্রেসকে কিন্তু প্রায় শূন্য হাতে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে নামতে হবে।
৫২-র লোকসভা ভোট থেকে ধরলে কংগ্রেস ৩০০-র বেশি আসন পেয়েছে ছ’বার। ৪০ শতাংশ বা তার থেকে বেশি ভোট পেয়েছে আট বার। সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে ১৯৮৪তে ৪১৫টি। ভোটের পরিমাণ ছিল ৪৮ শতাংশ। আর সেই জায়গা থেকে পিছু হটতে হটতে এখন কংগ্রেসের ৫২টি আসন, ১৯ শতাংশ ভোট। এই অধোগমন একদিনে হয়নি। গত ৩১ বছরে (১৯৯১-এর পর থেকে) মাত্র একবারই কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে (২০০৯ সাল, আসন ২০৬)।
দেশে যখন মূল্যবৃদ্ধি (হোল সেল প্রাইস) ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে প্রায় তখনই খবর পাওয়া গেল মোদী জমানায় (২০১৮-১৯) বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৫১ হাজার সরকারি স্কুল। দ্রুত বৃদ্ধি হচ্ছে বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা। যদিও শাসকদলের সেদিকে খেয়াল নেই। তারা ৩৯ শতাংশ ভোট আর ৩০০-র বেশি আসন পেয়ে শিবলিঙ্গ আর বুলডোজারে মেতে আছে।