Placeholder canvas
কলকাতা শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫ |
K:T:V Clock
দলতন্ত্রের দায় বইছেন রাজ্যপাল
জয়ন্ত চৌধুরী Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৬ জুলাই, ২০২১, ১১:৩৬:০৯ এম
  • / ৬৮৫ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন নেই। ঠারে ঠোরে রোজই নিজের সরকারের বিরুদ্ধে একথা বলে চলেছেন, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। শুধুমাত্র ভাষণ বা বিবৃতিতে নয়, রাজ্যপাল বস্তুত খোলাখুলি সক্রিয় রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ফেলেছেন। প্রশাসনিক প্রধানের মোড়কে তিনি প্রতিপদে ‘তাঁর নিজের প্রশাসন’ কে অপদস্ত করে চলেছেন। রাজ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকর্তার এই ভূমিকা সরকারের মাথা ব্যথার কারণও বটে। কেননা, এটা কোনো ব্যক্তি বিশেষের সঙ্গে বিরোধ নয়। আদতে সংবিধানের আওতাভুক্ত রাজ্যপালের পদকে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা, যা যুক্তরাষ্ট্রের ভাবধারার পরিপন্থী। ফলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত পদাধিকারীর সংঘাত এখন হাট-বাজারের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে তা যদি নিছকই পদাধিকারী দুই ব্যক্তির পারস্পরিক বিবাদ হতো তাহলে বৃহত্তর জনসমাজের বিশেষ কিছু যেতো-আসতো না। বাংলার ক্ষেত্রে বিষয়টি খুবই গুরুতর। সংবিধানকে ঢাল করে সেই সংবিধানের মৌলিক ধারনাটিকেই নস্যাৎ করতে উদ্যত বাংলার বড়লাট। তার সর্বশেষ নিদর্শন, তৃতীয় তৃণমূল সরকারের প্রথম বিধানসভা অধিবেশনে রাজ্যপালের বক্তৃতা পর্ব। অধিবেশনের সূচনায় বিরোধী বিজেপি সদস্যদের তুমুল বিক্ষোভের জেরে তিনি তাঁর ভাষণ অধিবেশনে পেশ করলেও পাঠ না করে কক্ষ ত্যাগে বাধ্য হন।

রাজ্যপালের নামে যে ভাষণ অধিবেশনে পেশ করা হয়,তা তাঁর হয়ে সংশ্লিষ্ট সরকার তৈরি করে দেয়। উল্লেখ্য, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অনুসারে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচিত সরকারের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন চালিত হয় সাংবিধানিক প্রধান তথা রাজ্যপালের মাধ্যমে। স্বভাবতই, রাজ্যপাল রাজ্য প্রশাসনকে ‘আমার সরকার’ বলে তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন। প্রশাসনের তরফে সরকারের বক্তব্য রাজ্যপালের বয়ানে অধিবেশনে পেশ করা হয়। সেই ভাষণের ওপর সরকার ও বিরোধীপক্ষ বিতর্ক করে। সাধারণত, মুখ্যমন্ত্রী সেই বিতর্কের জবাবি ভাষণ দেন। চাইলে পুরো ভাষণ খারিজ বা আংশিক সংশোধনী আনতে পারেন সদস্যরা। প্রয়োজনে ভোটাভুটির মাধ্যমে তার নিষ্পত্তি হয়। অন্যভাবে বলা যায় রাজ্যপালের ভাষণের পক্ষে সওয়াল করাটা যেমন সরকার পক্ষের কাজ ঠিক তেমনই তার বিরোধিতা করাটাই বিরোধী পক্ষের কর্তব্য।

রাজ্যপাল ধনখড় চাইছিলেন, সরকারের ভাষণ নবান্ন নয় রাজভবনই লিখবে। তাই অধিবেশনের প্রাক্কালে ওই ভাষণ সংশোধনের লক্ষ্যে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। রাজ্যের পরিষদীয় ইতিহাসে এমন নজির নেই। যেন নিজের অধঃস্তন কোনো কর্মীকে নিজের বাড়িতে তলব করছেন তিনি। অতীতে বাম জমানায় এমনকি যুক্তফ্রন্ট আমলেও রাজ্যপালের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের সংঘাত ঘটেছিল। গোটা দেশেই আলোড়ন ফেলেছিলো সেসব (রাজ্যপাল ধরমভির কাণ্ড) ঘটনা। পাঁচ দশকের আগের ঘটনা। যুক্তফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষের সরকারের তৈরি করা ভাষণের একটি অংশ পাঠ করতে অস্বীকার করেছিলেন রাজ্যপাল ধরমবীর। ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, বামেরা রাজ্যপালের অপসারণে সরব হয়েছিল। পরে আটের দশকের গোড়ায় দিল্লি প্রেরিত ওপি শর্মাকে ‘বাংলা ছাড়ো’ বলে সে সময়কার বামফ্রন্ট তার দলীয় কর্মীদের রাস্তায় নামিয়েছিল। রাজভবনের অদূরে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ করেছিল বাম ছাত্র-যুব রা রাজ্যপাল ওপি শর্মার ইস্তফা চেয়ে। সেটাও ছিল কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্কের তিক্ততার নজির। কিন্তু ধনখড় তাঁর নিজস্ব কায়দায় প্রথম দিন থেকেই রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা করে চলেছে। সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধ না মেনে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঘেরাও মুক্ত করতে যাওয়া হোক বা রাজ্য প্রশাসনের দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় টিপ্পনি, সবেতেই রাজভবনের অতিসক্রিয়তা।

আরওপড়ুন:‘ধনখড়ের’ বিরুদ্ধে জোরালো হচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগ

যিনি কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দিয়ে থাকেন, তিনি আবার প্রতিপদে নির্বাচিত একটি সরকারের কাজে হস্তক্ষেপে উদ্যত। রাজ্যের বিরোধী রাজনীতির জায়গা ক্রমে দখল করে ফেলেছেন রাজ্যপাল। তাঁর এই ভূমিকায় বিজেপি খুশি। কেননা, জনতার আদালতে হেরে গিয়েও রাজ্যে ক্ষমতা দখলের আর তর সইছে না গেরুয়া বাহিনীর। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা ভোটের ফলেই প্রকট। অগত্যা রাজভবনই ভরসা। বিজেপির কোনো খুচরো নেতার বিষয় নয়। খোদ দিল্লির দীনদয়াল ভবনের কর্তারা এই নকশা তৈরি করেছেন। রাজভবনকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে অপদস্ত করা, তাদের লক্ষ্য।

আরও পড়ুন: জৈনদের হাওয়ালা ডায়েরিতে রহস্যময় ‘ধনখড়’

মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর সরকার নির্বাচিত মানুষের রায়ে। তার কাছে তিনি দায়বদ্ধ। স্বভাবতই, রাজ্য পরিচালনার ত্রুটি বিচ্যুতির দায় নির্বাচিত সরকারের। তাই বিধানসভা অধিবেশনে সরকার তার বক্তব্য নিজের অগ্রাধিকরের ভিত্তিতে রচনা করবে। সাংবিধানিক প্রধানের কর্তব্য, তাঁর সরকার সংবিধানের মধ্যে থেকেই কাজ করছে কি না, সেদিকে সজাগ থাকা। কিন্তু ধনখড় নিজেই বিধিবিধানের ধার ধরেন না। সংবিধান অমান্য করে চলেছেন। নিজেকে নির্বাচিত রাজ্য সরকারের সমান্তরাল প্রশাসক হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। তাই নতুন বিধানসভা অধিবেশনের গোড়ায় ভাষণ বিতর্কে জড়ালেন। সরকারের লেখা ভাষণের কিছু অংশে তাঁর আপত্তি। বদলাতে চান সেই অংশ। অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল একটি আলংকারিক পদ। রাজ্য পরিচালনায় তাঁর নিজস্ব ক্ষমতা নেই। তিনি সরকারের ভাষণ পড়বেন। প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন না। এমনটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু দলীয় রাজনীতির কুশীলবে পর্যবসিত রাজ্যপাল সংবিধান নয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অধরা স্বপ্ন পূরণে উদগ্রীব হয়ে উঠলে ছবিটা বদলে যেতে বাধ্য। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বিপুল জনাদেশ নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় বসা সরকারকে মসৃণ ভাবে কাজ করতে না দেওয়াটাই বর্তমান রাজ্যপালের জন্য দিল্লির দীনদয়াল ভবনের অ্যাসাইনমেন্ট। তাই অধিবেশনের আগের সপ্তাহে তাঁকে দিল্লি গিয়ে অন্যান্যদের পাশাপাশি দফায় দফায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হয়।

আরও পড়ুন: কয়েক মিনিটের ভাষণ, বিধানসভা ছাড়লেন রাজ্যপাল

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকার পাঁচ বছর অন্তর জনগণের কাছে কৃতকর্মের জবাবদিহিতে বাধ্য। তাই আম বঙ্গবাসীর স্বার্থ রক্ষার দায় তাঁর নয়। ধনখড়ের দায়বদ্ধতা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। সে কারণেই তাঁর উদ্ভট আবদার, সরকারের ভাষণ তিনি সংশোধন করবেন।রাজ্যপালের কুর্সিকে দলের স্বার্থে ব্যবহারে মোদি যুগের অন্যতম অবদান। যেখানেই ভোটে ক্ষমতা দখল ব্যর্থ বা বিজেপি নড়বড়ে সেখানেই রাজভবনকে ব্যবহারে উদগ্রীব তারা। মহারাষ্ট্র, গোয়া, উত্তরাখন্ড থেকে কেরল সর্বত্রই রাজভবনের অতিসক্রিয়তার নিদর্শন রয়েছে। যা মূলত, যুক্তরাষ্ট্রীয় ধারণার উল্টোপথে হাঁটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ অভিমুখী হিন্দুত্ববাদী প্রকল্প ।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪
১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১
২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬ ২৭ ২৮
২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫
শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫
লাল শাড়ি, মাথা ভর্তি সিঁদুর, বধূ বেশে মনামী
শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫
চিন্নাস্বামী কাণ্ডে বিরাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের, এবার কী হবে
শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫
দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান: মোদি
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
সৃজিতের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে যিশু
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
বাংলাদেশের ভোট কবে? জানিয়ে দিলেন ইউনুস…
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
মধ্যপ্রদেশে সরকারি চাকরির বেতন নিচ্ছে ৫০,০০০ ভূত!
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
ত্বকের উজ্জলতা বাড়বে নিমেষে, বাড়িতেই চটজলদি বানিয়ে ফেলুন এই স্ক্রাবগুলি
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
নিট পিজি পরীক্ষা পিছোল, হবে ৩ অগাস্ট, সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
দেশে ইন্টারনেট পরিষেবায় বিপ্লব? মাস্কের সংস্থা স্টারলিঙ্ককে অনুমোদন
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
যোগী রাজ্যে ‘অপারেশন সিঁদুর’ সেলফি পয়েন্ট ঘিরে তুমুল বিতর্ক, কেড়ে নেওয়া হল ফোন
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
যোগী রাজ্যে তৈরি হল ‘অপারেশন সিঁদুর সেল্‌ফি পয়েন্ট’
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
Aajke | বীরভূমে কেষ্ট বিনা তৃণমূল, হিসেবটা দেখে নিন
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
এক ট্রেনে কাশ্মীর টু কন্যাকুমারী
শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team