দুর্গাপুর : দেবী পার্বতী এখানে রনংদেহী। ব্যাঘ্রবাহিনী। দেবীর হাতের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষত্ব। একই রূপ, একই সাজে পেরিয়েছে পাঁচ শতাব্দী। মদনপুরের মতন গোপালপুরের লায়েক বাড়ির দুর্গাও বাঘের পিঠে উপবিষ্ট। দুর্গাপুরে প্রাচীন গোপালপুরের লায়েক বাড়ির পুজো হয় আচার রীতি মেনেই। দেখতে দেখতে এই বাড়ির পুজো পা দেবে ৫১৩ বছরে।
প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে অনেক কথিত কাহিনী রয়েছে। শোনা যায়, রাজা সেলিম ওরফে জাহাঙ্গির নাকি এই লায়েক বাড়িতে পুজো পাঠাতেন। কারণ, তখন সেলিমের রাজ্যপাট ছিল কাঁকসার সিলামপুর এলাকায়। যা কি না পরগনা ছিল সেই সময়। আর যে পরগনার বাদশা ছিলেন জাহাঙ্গির। মা দুর্গা এখানে রনংদেহী। সিংহ নয় বাঘের পিঠে চেপে মা অসুর নিধন করেছিলেন। দেবীর হাতে রয়েছে বিশেষত্ব, দেবীর দশটি হাতের মধ্যে দুটি হাত ঠিক থাকলেও, বাকি আট হাত একেবারেই সোজা থাকে। সেই হাত মোড়ে না। মায়ের মাথায় সোনার মুকুট থাকলেও গায়ে মাটির অলঙ্কার। মৃৎশিল্পী প্রতিমার রূপদানের সময় অলঙ্কারগুলি তৈরি করে দেন।
আরও পড়ুন : পুজোয় অসুর বৃষ্টি, নবমী-দশমী ভিজবে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গ
মা দুর্গার সঙ্গে তার ছেলে মেয়েরা থাকলেও তাদের কোনও বাহন থাকে না লায়েক বাড়ির এই পুজোয়। পদ্মফুলের উপর বসে থাকেন মা লক্ষ্মী ও সরস্বতী। পুজোর চারদিন লায়েক বাড়ি আলোয় সেজে ওঠে। নামে আনন্দের ঢল। বাড়ির নতুন প্রজন্মও ছুটে আসে এই দিনে। আট থেকে আশি সবাই মেতে ওঠে পুজোর খুশিতে। আজ যৌথ পরিবার কী, তা অনেকেই জানে না। বেড়েছ একাকিত্ব। আর হারিয়ে যাওয়া সেই সংস্কৃতিকে ফেরাতে লায়েক বাড়ির সদস্যদের প্রয়াস। প্রবীণরা বেঁচে না থাকলেও পুজোর আয়োজনে কোনও খামতি থাকে না। এক কথায় লায়েক বাড়ির পুজো পুরনো প্রজন্মের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের মেলবন্ধন।