রাশিয়ায় বলশেভিক আন্দোলনের (Bolshevik Revolution) সঙ্গে আজকের ইউক্রেনে (Ukraine) যা ঘটছে তার কি কোথাও মিল আছে? অস্ট্রেলিয়ার এক প্রাক্তন মন্ত্রীর লেখা ইতিহাস বইয়ের পাতায় হয়তবা এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। বেশি দিন নয়। মাত্র দু’বছর আগে ২০২০ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। লেখক ডক্টর নেইজেল বইয়ের নাম ডিপ্লোম্যাসি মেকস হিস্ট্রি- দ্য আর্ট অফ ডায়লগ ইন আন্সারটেন টাইমস। কী আছে ওই বইয়ের পাতায়? একবার পাতা উলটে দেখা যাক।
রাশিয়ার রাজনীতিতে (Russian politics) পশ্চিমী মানুষ বা সভ্যতার হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। এর একটা দীর্ঘ এবং ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে যদি একবার ফিরে তাকানো যায়, তা হলে দেখা যাবে লেনিন ১৯১৭ সালে নির্বাসন কাটিয়ে ঘরে ফিরছেন। আর রাশিয়ায় নতুন করে ইতিহাস লেখা হচ্ছে। এই ঘটনা রাশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে বিপুল প্রভাব ফেলে। ওই সময়ের সঙ্গে আরও একশো বছর যোগ করুন, দেখা যাবে রাজনীতির গণিত, তার যোগবিয়োগ খুব একটা পালটায়নি।
অস্ট্রেলিয়ার ওই প্রাক্তন মন্ত্রী ডক্টর কারিন নেইজেল লিখছেন, এক অজানা চমকে দেওয়ার মতো ইতিহাস। প্রায় ৪০ বছর আগে ডক্টর নাইজিল ইতিহাসের ক্লাসরুমে জানতে পারেন এক গুপ্ত অভিযানের কথা। গোপন সেই অভিযানে জার্মান সেনাবাহিনীর অফিসারেরা নির্বাসন থেকে লেনিনকে রাশিয়ায় (Russian communist Vladimir Lenin) ফেরত পাঠাবার পরিকল্পনা করেন। সত্যিই তো চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। জার্মান সেনারা নাকি লেনিনকে জেনিভার গোপন আস্তানা থেকে পেট্রোগার্ডে (St. Petersburg) (আজকের নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ) ফেরানোর ব্যবস্থা করছে! কেন? ইতিহাসের লেখক বলছেন, রাশিয়ার রাজনীতিতে এও এক পশ্চিমী সভ্যতার হস্তক্ষেপ। আসল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ায় জারেদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া। ভিয়েনা এবং বার্লিনের সঙ্গে রাশিয়ার জারেদের বরাবরই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। শত্রুতা ছিল। আর তাই গোপন অভিযানে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনকে ভিয়েনা থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ পাঠানোর ব্যবস্থা।
রাজনীতির ময়দানে এই সব বাগবন্দি খেলার পিছনে ইউরোপের অনেক বড় লবি কাজ করত। রাশিয়ায় এই লবির নায়ক ছিলেন বেলারুশের বাসিন্দা। জন্মসূত্রে যিনি ইজরায়েলের মানুষ। নাম লাজারেভিচ হেলফন্ড (Alexander Parvus)। পড়ে যাকে মানুষ চিনেছিল আলেকজান্ডার পারভাস নামে। ইউরোপ এবং অত্তমান সাম্রাজ্যের একাধিক বিপ্লবী কাজকর্মে অর্থের যোগানদার এই আলেকজান্ডার। আলেকজান্ডারের দাবার বোর্ডে কখনও দেখতে পাওয়া গিয়েছে লেনিনকে, কখনও বা ট্রটোস্কিকে কখনও বা বিপ্লবী তরুণ তুর্কীকে।
১৯১৭ সাল
আরও পড়ুন- Webb Space Telescope: মহাবিশ্বের প্রথম ভোরের ঝলক দেখাবে ওয়েব টেলিস্কোপ
১৯১৪, সেপ্টেম্বর। ভিয়েনার এক কূটনীতিবিদ আলেকজান্ডার হোয়োস লিখলেন, ‘একমাত্র অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা গোলমালই রাশিয়াকে টলিয়ে দিতে পারে।’ এর কয়েক সপ্তাহ আগের কথা অস্ট্রিয়ার শাসক রাজা প্রথম ফ্রান্স জোসেফ সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যুদ্ধ এড়ানোর সবরকম চেষ্টা করেন রুশ রাজা দ্বিতীয় নিকোলাস। জার্মানির রাজা দ্বিতীয় উইহেমকে টেলিগ্রামে সন্ধি প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু সে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। অস্ট্রিয়ার কূটনীতির হওয়া তখন রুশ বিপ্লবীদের সমর্থনে বইছে। একইসঙ্গে লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের জন্য একটা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করা।
রাশিয়ায় বলশেভিক আন্দোলন
ইতিহাসের সেই ধুলো পড়া পাতা থেকে যদি এই সময়ের ইউক্রেনের দিকে নজর রাখা যায় কী চলছে সেখানে? দেখা যাবে যেন সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যেখানে কোনটা ঠিক, কোনটাই বা ভুল তা আলাদা করা যাচ্ছে না। গত বছরের অক্টোবরে ওয়াশিংটন পোস্টে একটি রিপোর্ট ছেপে বের হয়। জানা যায়, রুশ সেনারা রাশিয়ার মাটিতেই অভিযানে নেমেছে। এই নিয়ে হইচই হতেই, বলা ভালো পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে খানিকটা কোণঠাসা হয়েই দেশের সেনাবাহিনীকে সংযত হতে বলে এবং ইউক্রেনে নিয়োজিত রুশ কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নেয়। অ্যালেক্সি দানিলভ ইউক্রেনের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক সচিব জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যা থেকে মনে হয় রাশিয়া বড় ধরনের কোনও অভিযান চালাবে।
এর উলটো দিকের অবস্থানে দাঁড়িয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক বিদেশমন্ত্রি। তাঁরা যেন পোপের থেকেও এক কাঠি উপরে ক্যাথলিকদের মতো আচরণ করছেন। স্পষ্ট হুমকি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনের উপর কোনও রকম আক্রমণ হলে তার ফল ভুগতে হবে রাশিয়াকে। এমনকী আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকিও দেওয়া হয়েছে। মিডিয়ার তৈরি করা এই ছায়াযুদ্ধে যেন একশো বছর আগের ইতিহাস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট লিখছে কিয়েভে পুতুল সরকার বসাতে চাইছে রাশিয়া। আর তাতেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ন্যাটোবাহিনী(NATO )।