পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণায় সুজন মুখোপাধ্যায়
পীযূষ দার দুর্ঘটনার খবর যখন পাই তখন আমি দেশের বাইরে হংকং এ ছিলাম। পুজোর সময় ছিল। হোটেলের রুমে বসেই খবর পাই। তার পর যখন আমি ফিরি তখন সব শেষ। ফলে সেই সময় পীযূষ দাকে শেষ দেখা হয়নি।পীযূষ দাকে নিয়ে বলতে গেলে অনেক অনেক স্মৃতি। আসলে আমরা একসঙ্গে থিয়েটারে অভিনয় করেছি, সিরিয়াল, সিনেমা যেমন ব্যোমকেশ সিরিজে অভিনয় করেছি। পীযূষ দাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে হবে এটাই কখনও ভাবিনি।
তবে পীযূষ দার অভিনেতা হিসেবে যে উত্তরণ সেটা খুব ছোটবেলা থেকে দেখেছি আমি। ‘চেতনা’ নাট্য গোষ্ঠীতে অরুন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় জ্যেষ্ঠপুত্র নাটকে প্রধান চরিত্র দিয়ে তাঁর অভিনয়ে আবির্ভাব । এটা একটা রাশিয়ান নাটকের বাংলা রূপান্তর ছিল। একটা কমেডি নাটক। সেই সময় তিনি ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন অফিস সামলে নাটকের মহড়া দিতেন। আমার বাবাকে গুরু মানতেন। আমার বাবা নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন তাঁকে । তাই অভিনেতা হিসেবে পীযূষ দার নিজেকে গড়া চোখের সামনে দেখেছি। আমি ছোট ছিলাম কিন্তু কিছু স্মৃতি রয়ে গেছে। একনিষ্ঠ ছাত্র ছিলেন তিনি, এটা এখন খুব একটা দেখা যায়না। ধীরে ধীরে নিজেকে জাত অভিনেতা হিসেবে তৈরি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বহু যায়গায় শ্যো করতে গেছি , ‘মারীচ সংবাদে’ মারীচের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন , এগুলো অনেকেই জানেনা। ভারতবর্ষের বহু যায়গায় গেছেন অভিনয় করেছেন। একজন সুপুরুষ মানুষই শুধু ছিলেন না ভালো অভিনেতা তৈরি করেছিলেন নিজেকে। এটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। আমাকে ছোট ভাই হিসেবে, অভিনেতা হিসেবে খুব ভালোবাসতেন পছন্দ করতেন, আমার কাজ দেখতেন। কাজ ভালো লাগলে ফোন করে জানাতেন।
পীযূষ দা ধীরে ধীরে অভিনয়ে নিজেকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন, আজ ওর মত অভিনেতার বড় অভাব।পীযূষ দার গানের গলা দারুণ ছিল, মান্না দার ভক্ত ছিলেন, মান্না দার গানের অনেক অনুষ্ঠান করতেন । গায়ক হিসেবেও খুবই দক্ষ ছিলেন। সবাই পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় হতে পারেন না, এতো বহুমাত্রিক প্রতিভা সকলের থাকেনা।
অনুলিখন – সুচরিতা দে