ফেলুদার অ্যাডভেঞ্চার থেকে ব্যোমকেশের সত্য সন্ধান , হালফিলের সবর বা সোনাদার সঙ্গে রহস্য উৎঘাটন, দর্শক সিনেমা হল থেকে বেরোনার সময়ই আগামী সেকুয়েল এর অপেক্ষায় থাকে। তবে অন্য ধরণের গল্প নিয়ে সেকুয়েল হাতে গোনা দেখা যায়, অন্যদিকে যদি হিন্দি ভাষার ছবি দেখা হয় সেখানে একের পর এক ছবির সেকুয়েল বক্স অফিসে সুপার হিট। এদের মধ্য ‘ওয়েলকাম’, ‘ রেস’, ‘ গোলমাল ‘, ‘ধামাল’, ‘দাবাং’, ‘কৃষ’, ‘বাহুবলী’, ‘হেরাফেরি’, ‘সিংহম’, টাইগার জিন্দা হ্যায়, অগনিত নাম রয়েছে।
এই বিষয় নিয়ে যখন কলকাতার কিছু পরিচালক ও চলচ্চিত্র বিশ্লেষক এর সঙ্গে কথা হল কিছু বিষয় সামনে এলো । নতুন প্রজন্মের পরিচালক সৌরভের চক্রবর্তীর মতে ,”বাংলা ছবিতেই প্রথম এই সেকুয়েল এর বিষয় নিয়ে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়। উনি তো ওর সময় থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন, তাই সেই সময়েই তিনি পথের পাঁচালি, অপুর সংসার, অপরাজিত করেছিলেন। বানিয়েছেন ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন ‘, ‘হীরক রাজার দেশে’। তবে এই বিষয়টাকে ধরতে পারেনি বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি। গুপি, বাঘার মত এমন একটা কাল্পনিক চরিত্র যাকে দেখার অপেক্ষায় থাকে দর্শক। ওয়েব সিরিজ আসায় এই সেকুয়েল এর বিষয়ের দিকে নজর গেছে ইদানিং । এখনতো সেকুয়েল হচ্ছে। আগামী দিনে এর সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করছি।যে ছবির শেষে মানুষের আগ্রহ থাকবে পরে কী হতে পারে, সেই ছবির সেকুয়েল হবেই। এখন সবাই বুঝতে পারছে একটি চরিত্র যদি জনপ্রিয়তা পায় তাকে ধরে সেই ছবির সেকুয়েল করা সম্ভব। এতে দর্শকদের লয়ালটি পাওয়া যায়, তাকে দেখতে নির্দিষ্ট কিছু দর্শক আসবেই । সঙ্গে নতুন দর্শকও হবে।”
এই বিষয়ে পরিচালক অতনু ঘোষের বক্তব্য,” আমার মনে হয় কোনো ছবির যথেষ্ট বানিজ্যিক সাফল্য আসার পরেই কেউ সেকুয়েল এর কথা ভাবতে শুরু করে। তারপর তো অন্যান্য বিষয় রয়েছে। হিন্দি বা দক্ষণী ছবি যতটা বড়ো হিট হয়, সেরকম ইদানিং বাংলা ছবি হয়না বলেই আমার ধারণা।”
পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তর মতে, “বাংলায় কেন হয়না এটা নিয়ে ভাবতে হবে, আসলে সত্যজিত রায়ের ছবির কথা ভাবলে বলতে হয় উনি ট্রিলজি করেছেন। সৃজিতের ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ প্রিকোয়েল বলা হলেও গল্প একদমই আলাদা। ফ্র্যিনচাইজি হলেও সেকুয়েল হয়নি , এর কারণ সব সময়ই ছবির হিট হওয়া এটা ঠিক নয় । আমার একটি ছবি ‘অভিশপ্ত নাইটি’ র শেষে লেখাই ছিল আসছে ‘অভিশপ্ত পাজামা’। তবে এখনো করে উঠতেই পারিনি। তবে সিনেমার নিজস্ব একটা সময় আছে ঐ সময়েই একটা গল্প বলা হয়ে যায়। কোন সিনেমার গল্প ডিমান্ড করলে তবেই সেকুয়েল আসে। তবে এখন অনেক সেকুয়েল হচ্ছে।”
চলচ্চিত্র বিশ্লেষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের কথায় , “বাংলায় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিই নেই। মুম্বই তে একটা ইন্ডাস্ট্রি আছে। বহু আগেই এখানে সত্যজিৎ , মৃণাল সেনের কলকাতা ট্রিলজিতে সিনেমার একটা পরম্পরা রয়েছে। আসলে বাংলায় পঞ্চাশের দশকে নকশাল আমলে স্টুডিও ভেঙে দেওয়া হল , এর পর উত্তম কুমারের চলে যাওয়া ,পরবর্তী সময়ে সিনেমার বাজার নিরবিচ্ছিন্নভাবে আর এগোয়নি। এই ক্রাইসিসটা আজও রয়ে গেছে। ”
পরিচালক সুব্রত সেনের মতে ,”সম্প্রতি বেশকিছু সেকুয়েল হয়েছে, “চাঁদর পাহাড়’ উপন্যাস ভিত্তিক ছবি হলেও “অ্যামাজন অভিযান’তো সেকুয়েলই। ‘পাগলু’র মত ছবি বা ‘বোঝেনা সে বোঝেনা’ , ‘বিসর্জন ‘ সেকুয়েল তো হচ্ছে। তবে হিন্দির ক্ষেত্রেও যে খুব বেশি হয়, সেরকম বলা যায় না । ‘ধুম’ মাঝে মাঝে আসে তবে গল্পের কোন ধারাবাহিকতা থাকেনা। ‘মুন্না ভাই ‘ এরও আর দেখা পাওয়া যায়নি। আসলে বাংলার ক্ষেত্রে প্রযোজকরা যখন দেখে কোন একটা বিষয় হিট দিচ্ছে তখন সেই রকম ছবি চায়। সেকুয়েল এর ক্ষেত্রেও তাই হবে, এক সময় রিমেক চলছিল, এখন যদি সেকুয়েল হিট হয় সেটাই হবে, হচ্ছেও।”
হিন্দি সিনেমায় বহুদিন আগেই সেকুয়েল এর ফর্মুলা বাংলা ছবি দুই দিকপাল সত্যজিৎ রায় ও মৃণাল সেন তাঁদের সিটি ট্রিলজি করে পথ দেখিয়ে গেছেন। সেই ট্রেন্ড আবার ধীর গতিতে হলেও ফিরছে । গোয়েন্দা গল্পের বাইরেও “বেলা শুরু’, ‘ ‘বিজয়া ‘ র মতো সেকুয়েল হচ্ছে। তাই নতুন প্রজন্ম দেরিতে হলেও বাংলা সিনেমায় সেকুয়েল এর চাহিদা বুঝেছে।