সুরের জগত আবার নক্ষত্র পতন। ৬৯ বছর বয়সে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী তথা সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী। প্রসঙ্গত, গত বছর এপ্রিলে তিনি করণা আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিছুদিনের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি করোনামুক্ত হন। এরপর নানান শারীরিক সমস্যা নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন বলে জানা গেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে তিনি দীর্ঘ এক মাসের বেশি সেখানে ভর্তি ছিলেন। সোমবারই তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। মঙ্গলবার তার শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হতে থাকে। এরপর তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় কিন্তু মধ্যরাতের পর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৭০-১৯৮০ গোটা বলিউড মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিল বাপ্পির সুরে-গানে। ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবির গান তাঁর পরিচিতি কে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল। এরপর ‘শরাবি’, ‘চলতে চলতে’ সহ অসংখ্য জনপ্রিয় হিন্দি ছবিতে তিনি তাঁর সুরের জাদু দেখিয়েছিলেন। ২০২০ সালে তিনি ‘বাগি ৩’ ছবিতে তিনি শেষ গান করেছিলেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি সংগীত জগতে প্রবেশ করেছিলেন। বলিউডের ডিস্কো বয় নামে পরিচিত ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তার মুখে সর্বদা হাসি লেগে থাকত। হিন্দি ছাড়াও পাশাপাশি বাংলা সিনেমায় এবং একাধিক ভাষাতে তিনি গান গেয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার মা-বাবা বাঁশরী লাহিড়ী ও অপরেশ লাহিড়ী ও সঙ্গীত জগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।
আর এক প্রখ্যাত গায়ক কিশোর কুমার ছিলেন তার আত্মীয়।একমাত্র সন্তান বাপ্পি ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। মা-বাবার কাছেই পান প্রথম গানের তালিম। মা-বাবা তার প্রথম নাম দিয়েছিলেন অলোকেশ। কিন্তু তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন বাপ্পি নামে। অল্প বয়স থেকেই শাস্ত্রীয় সংগীত ও শ্যামাসঙ্গীতের পরিবেশে বড় হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। মাত্র তিন বছর বয়স থেকে তবলা বাজানোয় হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথম সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেন। এরপর থেকে কখনোই তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ এর গান সুপার হিট হওয়ার পর তিনি জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যান। মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি একের পর এক গানে সুরের জাদু ছড়িয়েছিলেন। যার ফলে শুধু এ দেশে নয় বিদেশেও তার অগণিত গুণমুগ্ধ তৈরি হয়েছিল। প্রায় পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ভারতীয় সঙ্গীত জগতে নক্ষত্রের মতন ছিলেন। গান ছাড়াও তার স্টাইল স্টেটমেন্ট এর জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। সোনার গয়না পরতে তিনি খুব ভালোবাসতেন। নিজেই বলতেন,’সোনাই আমার ভগবান’। আর সুরের ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন ভগবান।