২০১৯-এর নভেম্বর মাস। শীত ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে শহর কলকাতায়। কিন্তু তখনও সম্পর্কের উষ্ণতায় কোনও ভাঁটা পড়েনি সৌরভ-বিরাটের। সেই সময়েই ভারতের মাটিতে আয়োজিত প্রথম ‘পিঙ্ক বল টেস্ট’ জয় ভারতের। অনেকেই বিরাটের ক্যাপটেন্সিতে সৌরভকে খুঁজে পেতেন। বিরাট কোহলিও ইতিবাচকভাবেই দেখতেন বিষয়টি। সেইজন্যই তো সেবার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হঠাৎ করেই সৌরভের নাম টেনে আনেন সেদিনের ভারত অধিনায়ক। বলেন, বিদেশের মাটিতে জয় তো আমরা দাদা-কে দেখেই শিখেছি। এই মন্তব্যের আবার পাল্টা স্কোয়ারকাট দেন কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকর। সেই সময়ের ভারতের অধিনায়ককে উদ্দেশ্য করে লিটল মাস্টার বলেন, ‘দাদার আগেও আমরা বিদেশে টেস্ট ম্যাচ জিতেছিলাম। হয়ত সেটা অনেকের জানা নেই বা জেনেও প্রকাশ্যে বলছেন না।’
‘সৌরভ-কোহলি’ এই দুই হেভিওয়েটের এহেন সম্পর্ক মিলিয়ে দিয়েছিল দুই-ফ্যান ক্লাবকেও। একটা সময় সৌরভ-বিরাটের দুই ফ্যান ক্লাব মিলে মিশে কোথাও যেন এক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে যায়। করোনার মতো মারণরোগের থাবার গ্রাস দেখেছে গোটা বিশ্ব। সম্পর্কের কোয়ারিন্টিনেও বন্দি হন এক-একজন। উদাহরণস্বরূপ- প্রেমিক-প্রেমিকা, শিক্ষক-ছাত্র, গুরু-শিষ্য, সৌরভ-কোহলি। সূত্রপাত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বের অনিচ্ছা প্রকাশ নিয়ে। সেইসময়ে সৌরভ কোহলিকে অধিনায়কত্ব না ছাড়ার জন্য প্রথমে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায়, তদানীন্তন বিসিসিআই সভাপতি তাঁকে স্পষ্ট জানান হোয়াইট বল ক্রিকেটে ভারতীয় দলে দু’জন অধিনায়ককে রাখা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ওয়ান ডে ক্যাপটেন্সি থেকেও সরে দাঁড়াতে হবে কোহলিকে।’ সেখানেই হয় সূত্রপাত। দুই সম্পর্কের মধ্যে অদৃশ্য বিস্ফোরণের সাক্ষী আপনি-আমি প্রত্যেকেই। দুই ফ্যান ক্লাবের তরফ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে অবিরত গোলাগুলি-বোমাবর্ষণ! যেটা ভারতীয় ক্রিকেটের দুই সুপারস্টারের মধ্যে তিক্ততা বাড়াতে অনুঘটকের কাজ করে। যার রেশ দেখা যায় গত আইপিএলেও। এরপর অবশ্য বেশ কয়েকবার কোহলি প্রসঙ্গে প্রশংসা করতে শোনা যায় সৌরভকে। যদিও কতটা মন থেকে বলেছেন, সেটা মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন! তবে সূত্র বলছে বরফ এখন অনেকটাই গলছে।
বহুদিন পর কোহলি প্রসঙ্গে আবারও মুখ খুললেন মহারাজ। বললেন, ‘বহু বার বলেছি যে, আমি বিরাটকে নেতৃত্ব থেকে সরাইনি। বিরাট টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিতে চাইছিল না। তাই ও টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর, আমি বলেছিলাম এক দিনের ক্রিকেটের নেতৃত্ব থেকেও সরে যেতে। সে ক্ষেত্রে সাদা বলে এক জন নতুন অধিনায়ক হবে।‘
ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যানরা কিন্তু আবারও দু’জনকে এক ফ্রেমে দেখতে চায়। শীত কেটে যাক। বরফ গলুক। সম্পর্কের উষ্ণতা আবারও ফিরে আসুক। একসঙ্গে দুই সুপার-হিরোর ম্যাজিক আবারও দেখুক ক্রিকেট দুনিয়া। পুরোনো দিনের মতো আবারও বার্থ-ডে পার্টিতে কেক কাটুক কোহলি। সেই কেক দু’জন দুজনকে খাইয়ে দিক। এই ছবিটাই হোক ভারতীয় ক্রিকেটের আগামীর পোস্টার। এখনও যে ভারতীয় ক্রিকেটকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে এই দু’জনের।