বলিউডের লিজেন্ডারি অভিনেত্রী আশা পারেখ ৭৯ বছর বয়সে পেলেন দাদাসাহেব ফালকে সম্মান। বলিউডের রূপোলি পর্দার এই গ্লামারাস অভিনেত্রী অবিবাহিত থেকে গিয়েছেন। কিন্তু কেন এই জনপ্রিয় নায়িকা সারা জীবনই বিয়ে করেননি! সে উত্তর তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বেশ কিছু বছর আগে জানিয়েছিলেন। প্রয়াত পরিচালক-প্রযোজক নাসির হোসেনকে ভালোবেসে সারা জীবন একাই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এই নাসির হুসেনের হাত ধরেই বলিউডের রঙিন পর্দায় তাঁর অভিষেক হয়েছিল। নাসির হুসেন ছিলেন সম্পর্কে আমির খানের জ্যাঠা। রক্ষণশীল গুজরাঠি পরিবারে জন্ম হয়েছিল আশা পারেখের। মঞ্চ-নাচে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী। ১৯৫৯ নাসির হোসেন পরিচালিত ‘দিল দে কে দেখো’ ছবিতে আশাকে শামি কাপুরের বিপরীতে প্রথম পর্দায় দেখা যায়। সারা ভারতে ছবিটি সিলভার জুবলি হয়। এরপর ১৯৬১ সালে নাসিরের আরেকটি ছবি ‘জব পেয়ার কিসিসে হোতা হ্যায়’ তেও তিনি অভিনয় করেন। এই ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন সুপারস্টার দেবানন্দ। প্রসঙ্গত,কলকাতার সোসাইটি সিনেমা হলে এই ছবির প্রিমিয়ারে এসেছিলেন আশা পারেখ এবং দেবানন্দ। শুধু তাই নয়, ছবির শুটিং করে গিয়েছিলেন দার্জিলিং শহরেও। এরপর আশাপরিককে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক তার ছবি সুপারহিট হতে থাকে। দিলীপ কুমার এবং রাজ কাপুর ছাড়া সমস্ত বলিউড হিরোর সঙ্গে কয়েক বছরের মধ্যে তিনি কাজ করে ফেলেন। রাজেন্দ্র কুমার-রাজকুমারের মতন নামকরা হিরোদের সঙ্গে তিনি সুপারহিট ছবি ‘ঘরানা’ তে অভিনয় করেন। এছাড়া তৎকালীন জনপ্রিয় নায়ক জয় মুখার্জির সঙ্গে ‘লাভ ইন টোকিও’, ‘জিদ্দি’, ‘ফির ওহি দিল লায়া হু’র মতো আরও অসংখ্য ছবি করেন। ৬ এর দশকের মাঝামাঝি আশা পারখের সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর জুটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘আয় দিল বাহার কে’, ‘শিকার’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’ এর মত সুপারহিট ছবি দিয়েছিল এই জুটি। শামি কাপুরের সঙ্গে ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছবিতে আশা পারেখকে আজও দর্শকরা মনে রেখেছে। ছবিতে অসাধারণ নাচ-গানের জন্য তাঁরা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ ছবির প্রিমিয়ারে জ্যোতি সিনেমায় এসেছিলেন অভিনেত্রী। এছাড়াও ‘লাভ ইন টোকিও’ ছবির প্রিমিয়ারে কলকাতা ঘুরে গিয়েছিলেন আশাজি। প্রিমিয়ার হয়েছিল তৎকালীন ওরিয়েন্ট সিনেমা হলে। ছয়ের দশকে সবচেয়ে বেশি জুবলি হিট ছিল অভিনেত্রী আশার ছবি। ওয়াহিদা রহমান কিংবা বৈজয়ন্তীমালার মত অভিনয় গুণ না থাকলেও মিষ্টি নায়িকা হিসেবে তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। কুচিপুরি ও ভারতনাট্যম এ পারদর্শী এই নায়িকা একাই একটা ছবিকে টেনে নিয়ে যেতে পারতেন। তারপর সাতের দশকে বলিউডে নায়ক হয়ে এলেন রাজেশ খান্না। তার সঙ্গে আশা পারেখের ‘কাটি পতঙ্গ’ এক নতুন ইতিহাস তৈরি করল। অভিনেত্রীকে মনোজ কুমারের সঙ্গে ‘দো বদন’ ছবিতে সিরিয়াস চরিত্রে দেখা গিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে এই ছবি সুপার হিট হয়েছিল। সাথের দশকের এর মাঝামাঝি তিনি চরিত্র অভিনয় শুরু করেন। ‘ম্যায় তুলসী তেরি আঙ্গন মে’ ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজয় আনন্দ ও অভিনেত্রী নূতন। ১৯৭৮ সালের এই ছবিতেও তিনি নিজের কাজের ছাপ রেখেছিলেন। টলি-বলি হিরো বিশ্বজিতের সঙ্গে তরুণ মজুমদারের পরিচালনায় ‘পলাতক’এর হিন্দি ভার্সন ‘রাহগীর’ ছবিতে কাজ করেন আশা পারেখ। এই ছবি তেমন সফল না হলেও বিশ্বজিতের সঙ্গে ‘মেরে সনম’ ছবিটি যথেষ্ট হিট হয়েছিল। শেষবার ‘কাটি পতঙ্গ’ ছবির প্রিমিয়ারে রাজেশ খান্নার সঙ্গে কলকাতার ম্যাজিস্টক সিনেমা হল ঘুরে গিয়েছিলেন আশা পারেখ।