বসিরহাট : গ্রামে কালীপুজো একটাই হবে। কালী ঠাকুরের ছবি লাগাতে পারবে না বাড়িতে। আজও এই পরম্পরা বহন করে চলেছে গোকনা গ্রাম।মা ভবানীর পুজো দিয়ে ডাকাতি করতে যাওয়ার রোমহর্ষক কাহিনী রয়েছে গোকনার কালী মন্দিরে।
বসিরহাটের বাদুড়িয়া ব্লকের গোকনা গ্রাম। এই গ্রামেরই বহু পুরানো এবং জাগ্রত গোকনা কালী মন্দিরের মা ভবানী বহু পূজিত। অনেক ইতিহাস এবং ঐতিহ্যমন্ডিত তথ্য জড়িয়ে রয়েছে মন্দির ঘিরে। জমিদারী আমল থেকে চলে আসছে এই পুজো।
বর্তমানে স্থানীয় গ্রামবাসীদের উদ্যোগেই কালী পুজোর দিন সাড়ম্বরে কালী মাতার আরাধনায় মেতে ওঠেন সকলে। দুর্গাপুজোর পর থেকেই শুরু হয় এই মন্দিরে কালী পুজোর প্রস্তুতি। মন্দিরটি এতই পুরনো যে এর সঙ্গে জড়িত কিছু জনশ্রুত ইতিহাস দ্বিমত পোষণ করে। তবে যে তথ্যগুলো বহুজন সমাদৃত সেগুলোই গ্রহণযোগ্য। টাকির জমিদারদের কাছ থেকে পত্তনি পেয়ে হালদাররা এখানে বসবাস শুরু করেন। তাঁরাই এখানে ছোট কালী মাতার পুজো করতেন। পাথুরে কালীমূর্তি মা ভবানীর মন্দিরটা পাকাপাকি নির্মাণ হয় ১৩১৯ সালের ১৬ই বৈশাখে। মন্দির সংস্কার হয় ১৩৮৮ সালে। এর অনেক বছর আগে খড়-গোলপাতার ছাঁউনির মন্দির ছিল হেমন্তের কার্তিকী অমাবস্যার রাতে শ্যামাপূজা হতো।
আরও পড়ুন : দিল্লি এইমস থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলেন রাজ্যপাল জগদীপ জগদীপ ধনখড়
কথিত আছে যে, ধান্যকুড়িয়ার জমিদার মহেন্দ্রনাথ গাইনের ছেলে মরণাপন্ন হলে স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি এই মন্দিরে আসেন। মায়ের আশীর্বাদে জমিদারের ছেলে পুনর্জীবন লাভ করেন। এর ফলে জমিদার মহেন্দ্রনাথ গাইন পাকা গাঁথুনির মন্দির নির্মাণ করে দেন। তার আগে থানটি ছিল প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো।
আরও পড়ুন : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে আমন্ত্রণ পেলেন মমতা
জমিদার মন্দির পাকা করার প্রস্তাব দিলে পুরোহিত কালীধন হালদারের জমি থেকে মাটি নিয়ে ইট পুড়িয়ে পুরনো থানের পাশেই পাকা গাঁথনির বড় মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আগের ছোট প্রতিমাটি মন্দিরের পেছনের পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয় এবং কৃষ্ণনগর থেকে দেড়শো বছর আগে প্রতিমা নিয়ে আসেন জমিদার মহেন্দ্র গাইন। পুরনো প্রতিমা পুকুরে বিসর্জন দিলেও পুরনো থানের ঘটটি নতুন মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার বয়স এখন প্রায় পাঁচশো বছরেরও বেশি। এই মন্দিরে মা ভবানীর সঙ্গে পঞ্চানন শিব, নারায়ণ পূজিত হন। এক সময় ডাকাতরা এই মন্দিরের পেছনের পুকুরে ডুব দিয়ে মা ভবানীর পুজো দিয়ে ডাকাতি করতে যেত বলে জনশ্রুতি আছে।
ঐতিহ্যবাহী এই কালী মন্দির প্রতি কালী পুজোর রাতে সেজে ওঠে স্বমহিমায়। কালী পুজোর সপ্তাহে গ্রামবাসীরা মন্দির চাতালেই মেতে থাকে। মন্দিরে পাঠাবলি, কুমড়োবলির আয়োজন থাকে। আশপাশের প্রচুর লোক সমবেত হয় এই মন্দিরে।