মালদহ : মনুয়া কান্ডের ছায়া এবার মালদহের হরিশচন্দ্রপুরে। স্বামীর হাত পা ভেঙে, মাথা থেঁতলে নৃশংস ভাবে খুন করলেন স্ত্রী ও স্বামীর পিসতুতো দাদা। খুনের পর বাড়ির সিঁড়ির নীচে দেহ লুকিয়ে রাখে তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। এই ঘটনায় গ্রেফতার হলেন দুজনেই।
পরকীয়া ও সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহর হরিশচন্দ্রপুরের ডেইলি মার্কেট এলাকায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে পুলিশ আটক করেছে তাঁদের ছেলে বাপী মুসোহরকে। মৃতের নাম রাম মুসোহর (৩৭)। হরিশচন্দ্রপুরের ডেইলি মার্কেট এলাকার বাসিন্দা রাম মুসোহর নিয়মিত মদ্যপান করতেন। যা নিয়ে তাঁর স্ত্রী পঞ্চমী মুসোহরের সঙ্গে তাঁর হামেশাই বচসা লেগে থাকতো। ছেলে বাপী মুসোহরের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক ছিল না তাঁর। রাম ও বাপী, দু’জন্যেই রঙ মিস্ত্রির কাজ করতেন। কিন্তু এরই মধ্যে রামের পিসতুতো দাদা মনোজ মুসোহর দিল্লি থেকে হঠাৎ হরিশচন্দ্রপুরে এসে রঙের মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। তাঁর ব্যবসাও বেশ জমে ওঠে।
আরও পড়ুন : মালদহে তিন বছরের মেয়েকে গলা কেটে খুন করল মা
পরবর্তীতে রাম ও পঞ্চমীদের সঙ্গেই একই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন মনোজ। এরপরেই পঞ্চমীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে রামের সঙ্গে বিবাদ দেখা দেয়। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, দিনে দিনে রামের মদ্যপান আরও বেড়ে গিয়েছিল। কাজকর্ম কিছুই করত না সে। সেই সময় সংসার চালাতো মনোজ। তাঁকে সাহায্য করত বাপী। এরপরে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন পঞ্চমী ও মনোজ। আর এই নিয়েই তাঁদের সঙ্গে রামের ফের একবার অশান্তি শুরু হয়। মঙ্গলবার রাতে তাঁদের বাড়ির সিঁড়ির নীচে থেকে হাত পা ভাঙা এবং মাথা থ্যঁতলানো অবস্থায় রামের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই দেহ লোপাটের জন্যে একটি গাড়ির খোঁজ করছিল মনোজ। এমনকি রামের ছেলে বাপীকেও একটি গাড়ি ভাড়া করে আনতে বলেন মনোজ।
আরও পড়ুন : সম্পত্তির লোভে প্রেমিককে আত্মহত্যার প্ররোচনা, খুনের অভিযোগ প্রেমিকার বিরুদ্ধে
কিন্তু বাপীর কাছে বিষয়টি স্পষ্ট ছিল না বলে অনুমান পুলিশের। ঘটনার সময় সম্ভবত সে ঘরের বাইরে থাকায় রামের খুনের বিষয়টি বাপী জানতো না। হয়ত তাঁর বাবা পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন, এমন বলা হয়ে থাকতে পারে তাঁকে, মত পুলিশের। সে গাড়ির খোঁজ করতে গেলে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। কয়েকজন তাঁদের বাড়িতে গেলেই, সিঁড়ির নীচে রাখা রামের দেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে গভীর রাতে আসে হরিশচন্দ্রপুর থানার পুলিশ। তারা দেহ উদ্ধার করে। শাবল,গাঁইতি,দা ইত্যাদি অস্ত্র উদ্ধার হয় ঘর থেকে। রামের মুখ চেপে ধরে তাঁকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা টিপেও রাখা হয় বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। পুলিশ পঞ্চমী ও মনোজকে গ্রেফতার করেছে। আটক করা হয়েছে ছেলে বাপীকেও। এলাকার স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।