জলপাইগুড়ি : পুজো আসে পুজো যায়। কিন্তু ঘোরেনা তাদের ভাগ্যের চাকা। তবুও লক্ষ্মী লাভের আশায় ফি বছর লক্ষ্মী প্রতিমা বানায় ময়নাগুড়ির পাল পাড়ার বাসিন্দারা।
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের ময়নাগুড়ি রোড় এলাকায় এখন সাজো সাজো রব। কারণ এই এলাকায় রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টি পাল পরিবার। যাদের মূল উপার্যনের পথ হল লক্ষ্মী, বিশ্বকর্মা ও সরস্বতী প্রতিমা বানিয়ে বিক্রি করা। আর এই ৩ প্রতিমা বানিয়ে সারা বছরের সংসার চালানোর খরচ যোগার করে থাকে এই পাল পরিবারগুলি। তাঁরা মূলত পাইকারি দরে শহরের দশকর্মা ভান্ডারে প্রতিমা বিক্রি করে থাকে। এক একটা প্রতিমা ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। ছোট বড় মিলিয়ে ৬০০ থেকে ১২০০ লক্ষ্মী প্রতিমা বানান তাঁরা।
আরও পড়ুন : হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু, চাঞ্চল্য জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুর জঙ্গলে
কিন্তু গত বছর থেকে করোনা সংক্রমণের জেরে বিভিন্ন ধরণের প্রতিমা বিক্রি প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। এবছরেও বিভিন্ন মাপের বিশ্বকর্মা ঠাকুর বানিয়েছিল এই পরিবারগুলি। কিন্তু তেমন ভাবে বিক্রি না হওয়ায় সমস্যায় পড়ে এই ক্ষুদ্র প্রতিমা শিল্পীরা। চলতি বছরে করোনার প্রকোপ কিছুটা কম থাকায় এ বছর ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো মহা ধূমধামের সঙ্গে হবে বলে আশা রাখছেন তাঁরা। তাই বাড়ির বউ, বাচ্চা, নাতি নাতনি সকলকে নিয়ে প্রতিমা বানাতে শুরু করেছেন পাল পরিবারগুলি। এদের মধ্যে অনেকেই তাঁদের পড়াশোনা ছেড়ে লেগে পড়েছে প্রতিমা বানাতে।
পাল পাড়ার এক বাসিন্দা আল্পনা পাল জানালেন, আগে তিনি কখনও এই কাজ করেননি। বিয়ের পর থেকে গত ছয় বছর ধরে সংসারে লক্ষ্মী লাভের আশায় প্রতিমা বানাচ্ছেন। কার্তিক পাল জানালেন, ছোট বেলা থেকে তিনি বাবার সঙ্গে এই কাজ করে আসছেন। গত বছর থেকে করোনার কারণে পুজো হয়নি। জড় ফলে পুজোর বাজার অত্যন্ত খারাপ। প্রতিমা বানানোর খরচ উঠছে না। তাই এবারে কারিগর না রেখে বাড়ির সকলে মিলে প্রতিমা তৈরি করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন : দুর্গা পুজো শেষে জলপাইগুড়িতে বনদুর্গার বোধন
মাধবী পাল জানান, সে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। গত ১৪ বছর ধরে বাবার হাতে হাতে প্রতিমা বানাতে সাহায্য করতো সে। কিন্তু বর্তমানে বাড়িতে অভাব অনটন। বাবা কার্তিক পালের পক্ষে একা প্রতিমা বানানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি কারিগর রেখে প্রতিমা বানানোর খরচ অনেক। তাই বাবাকে সাহায্য করতে পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখন বাবার সঙ্গে প্রতিমা বানাচ্ছেন তিনি।