বিষ্ণুপুর: শকুন্তলা। তিনকন্যা। রূপসা। এগুলো কোনও মহিলার নাম নয়। বালুচরী শাড়ির নাম। কোনও শাড়ির গায়ে বাঁকুড়ার রাজগ্রামের গামছা শিল্প, কোনওটার গায়ে পাঁচমুড়ার টেরাকোটা শিল্প আবার কোনওটায় রয়েছে বিষ্ণুপুরের লুপ্তপ্রায় লন্ঠন শিল্প। এই অভিনব শাড়িতে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া শিল্পকে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী অমিতাভ পাল।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্য বালুচরী শাড়ি। শাড়ির ইতিহাস প্রায় অষ্টাদশ শতকের। সে সময় ভারতের নানা অঞ্চল এমনকি বাইরে থেকেও বণিকরা আসতেন বাণিজ্যের জন্য। ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে বালুর চরে গড়ে ওঠে বয়ন শিল্প। বালুর চরে এই শিল্প গড়ে ওঠে বলে এর নাম বালুচরী। অন্য মতে, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে তিনি তাঁর রাজধানী ঢাকা থেকে মকসুদাবাদে নিয়ে যান। সেখানে বালুর চরের শিল্পীদের নির্দেশ দেন বেগমদের জন্য নতুন শাড়ি তৈরি করার। সেই থেকেই এই শাড়ি বালুচরী শাড়ি নামে পরিচিত হয়।
মল্লরাজাদের যুদ্ধের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন বালুচরী শাড়িতে
শাড়ির দাম ১৮ হাজার থেকে শুরু হয়ে ১ লাখ, দেড় লাখ পর্যন্ত হয়। শাড়ির খ্যাতি রয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। এই অভিনব শাড়ি বুনতে সময় লাগছে ১৫ দিন। ইতিমধ্যেই অভিনব এই শাড়ির ভালো সংখ্যক বরাত পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন শিল্পী অমিতাভ পাল। শাড়িতে ফুটেছে বিভিন্ন জেলার নানান হস্তশিল্পের নিদর্শন।
আরও পড়ুন: বাংলার মানুষ বিজেপিকে তাড়াতে পারলে উত্তরপ্রদেশ কেন পারবে না, প্রশ্ন অখিলেশের
এ বারের পুজোয় নতুন নতুন নামে এই শাড়ি ক্রেতাদের কাছে হাজির করছেন অমিতাভ পাল। ইতিহাসকে নিপুণভাবে শাড়ির গায়ে, আঁচল ও পাড়ের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। প্রতি বছর পুজোতে বালুচরী শাড়ির মধ্যে অভিনবত্বের চমক থাকে শিল্পীর। বাংলা ও অসমের মেলবন্ধন ঘটিয়ে গত বছর অমিতাভ পালের আবিষ্কার ছিল বালুচরী মেখলা। যা মন জয় করেছিল ক্রেতাদের। একদিকে ইতিহাস অন্যদিকে হস্তশিল্প এই দুইকে নিয়ে এবারের পুজোর অভিনব বালুচরী শাড়িও বাজার মাতাবে বলে মত বিষ্ণুপুরের শিল্পীর।
আরও পড়ুন: কৌশিকী অমাবস্যায় বন্ধ তারাপীঠ মন্দির