হুগলি : বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বন। তাই দুর্গাপুজো ও কালীপুজো শেষে যখন সবাই আবার নিজের নিজের কাজে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন এই রাজ্যের ৩ শহর সাজছে নিজের রঙে। হুগলির ঐতিহ্যের শহর চন্দননগর এবার মা জগদ্ধাত্রীর আরাধনার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। ঐতিহ্যের শহরে নিজেদের ঘরানায় পুজোয় অভ্যস্ত ফরাস ডাঙার বাসিন্দারা। বিশালাকার মাতৃ মূর্তি, থিমের মণ্ডপ , আলো ঝলমলে শহরের প্রতিটি রাস্তা, আর প্রচুর মানুষের ভিড়ে চারদিন মেতে ওঠেন এই শহরের মানুষজন। কিন্তু গত বছরের করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেশ কিছুটা ব্যাহত হয়েছিল সেই আনন্দ। এবছর কিছুটা হলেও বদলেছে পরিস্থিতি। তাই আবার ছন্দে ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন হুগলির প্রাচীন জনপদের তিন শহরের মানুষরা।
চন্দননগর, মানকুন্ডু এবং ভদ্রেশ্বর এই তিনটি শহরে প্রায় ৩০০’র বেশি জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। থিমের মণ্ডপ, আলোর রোশনাই, আর ডাকের সাজে মাতৃমূর্তি নজর কাড়েন দর্শকদের। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কোর্টের নির্দেশে তা কিছুটা বাদ সেধেছে। তাও নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবারও কোথাও গ্রাম বাংলার ডোকরার কাজ কোথাও আবার পেনশিল দিয়ে মণ্ডপে ফুটে উঠছে শিল্প কর্ম। কোথাও আবার করোনা থেকে মুক্তি পেতে এন্টিসেফটিক হলুদের ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে বিশাল হাড়িতে ফোটানো হচ্ছে হলুদ।
আরও পড়ুন : কালী ও জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানের দিনক্ষণ ও বিধি ঘোষণা নবান্নের
আগামী ৪ দিন এই পুজোর স্বাদ নিতে পারবেন অন্য শহর থেকে আসা দর্শকরা। গত বছর থেকেই ভিড় সামাল দিতে এই শহরের গর্বের আলো দিয়ে শোভাযাত্রা বন্ধ করতে হয়েছে। যা এবছরও বলবৎ থাকছে। কিন্তু নিজেদের শহরের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা চালু রাখতে এবার উদ্যোগী বারোয়ারীর উদ্যোক্তারা। তাই শোভাযাত্রা বন্ধ থাকলেও একমাত্র এই শহরের গর্ব, আলোর ব্যবহারের বিকল্প খুঁজছেন তারা। মণ্ডপ সজ্জার পাশাপাশি রাস্তার আলোর ব্যবহারে জোর দিয়েছেন প্রায় সব পুজো কমিটি। জি টি রোড থেকে গলি রাস্তা সব জায়গায় এবার সাজানো হচ্ছে বিশাল বিশাল আলোর তোরণ দিয়ে। পুজো ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতাও চোখে পড়ার মত। প্রতি বছরের মত এবারও পঞ্চমী থেকে দশমী দুপুর ২টো থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নো এন্ট্টি ব্যবস্থা চালু থাকছে। সেই সঙ্গে পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা, সড়কপথ,রেলপথ এবং জলপথে পরিবহন ব্যবস্থাতেও জোর দেওয়া হয়েছে। চন্দননগর কমিশনারেট ছাড়াও অন্য জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ কর্মী, ড্রোনে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাতেও বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। আগামী ৪ দিন এই আলো মেখেই আনন্দের সঙ্গে সামিল হতে চান ৩ শহরের মানুষ।