একদিকে যশের কারণে জলবন্দি মানুষ, অন্য দিকে টানা বৃষ্টির ফলে বিপাকে সুন্দরবনবাসী। লাগাতার বৃষ্টিতে জলমগ্ন বিভিন্ন গ্রাম। গ্রামে ঢুকছে নোনা জল। খাবার, পানীয় জল, জল দূষণের পাশাপাশি সুন্দরবনের ঘর ছাড়া বানভাসি মানুষের এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শৌচক্রিয়া। সমস্যায় পড়ছেন বিশেষ করে মহিলারা। পুরুষেরা মাঠে-ঘাটে শৌচকর্ম সারলেও দিনের বেলায় মহিলারা বিপাকে পড়ছেন। তাই অপেক্ষা করতে হয়, কখন অন্ধকার নামবে৷ রাতের অন্ধকারেই শৌচকর্ম সারতে হচ্ছে তাঁদের।
আরও পড়ুন মোদীর বৈঠকের আগে আলোচনার দাবি মেহবুবার
জলমগ্ন বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ১ ও ২নং ও মিনাখাঁর মতো সুন্দরবনের ব্লকগুলিতে অধিকাংশ মহিলাই শৌচালয় থেকে বঞ্চিত। তাই কোথাও বাড়ির সীমানার শেষ প্রান্তে চারটি খুঁটি পুঁতে, পলিথিন ঘিরে কোনওমতে সেখানেই সারেন শৌচকর্ম। কিন্তু যশ ও ভরা কোটালের বিপর্যয়ের পর ২০ দিন কাটতে চললেও এখনও জল নামেনি বহু এলাকায়। অনেক ত্রাণ শিবিরেও নেই শৌচালয়। কোথাও বা মাথাপিছু ২০০ জনের জন্য একটি শৌচালয়। প্রশাসনের তরফে পর্যাপ্ত পরিবেশবান্ধব শৌচাগারের দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি অনেক জায়গাতেই। তাই শৌচকর্ম করতে বেগ পেতে হচ্ছে সুন্দরবনবাসীকে। কখন দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামবে সেই অপেক্ষাতেই থাকতে হয় মামুদপুর, সাহেবখালি, দুলদুলি, রূপমারি, সন্দেশখালির ভোলাখালি, কালিনগর, জেলেখালি, মনিপুর ও কোড়াকাটির মতো সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মহিলাদের।
আরও পড়ুন করোনা যুদ্ধে বৃহন্নলারা
রাতেও শৌচকর্মে সমস্যা হচ্ছে, এমনটাই জানিয়েছে এলাকার মহিলারা। তাঁরা বলেন, ‘চারিদিক ডুবে গিয়েছে। গবাদি পশু-মাছ জলে ভাসছে, জল দূষিত হয়ে গিয়েছে। সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করতে হচ্ছে। যা রীতিমতো ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার থেকে আরও ভয়ের বিষয় সাপ-খোপের উপদ্রব। বাড়িঘর ভেঙে গিয়েছে। রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি। বাড়িতে একটা পলিথিন টাঙানো শৌচাগার ছিল। তাও জলে ডুবে গিয়েছে। যাঁদের পাকা বাড়ি আছে, তাঁদের শৌচাগারে যাচ্ছিলাম। অনেকেই আপত্তি জানাচ্ছেন। তবুও বাধ্য হয়েই একরকম জোর করেই যেতে হচ্ছে। না হলে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এখন রাত নামলে বানের জলে ভেসে থাকা মাঠেঘাটে যেতে হয়। চারিদিকের জলও পচা।
আরও পড়ুন ‘লাইগার’ ওটিটি তে?
পাশাপাশি ‘ হিঙ্গলগঞ্জের এক মহিলা বলেন, “বাড়ি ডুবেছে। ঘরের মধ্যেই হাঁটু জল। সেদিনের পর থেকে বাঁধের ওপর আছি। পুরুষরা ফাঁকা জায়গায় শৌচকর্ম করতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা পারি না।” অভিযোগ, সরকারি-বেসরকারি ভাবে কিছুটা ত্রাণের ব্যবস্থা হলেও শৌচাগারের সমস্যা মেটেনি। তাই এই শৌচকর্মের সমস্যায় রয়েছেন সুন্দরবনের আমিনা, মিনা, শেফালি, শ্যামলী, ঊষার মতো অসংখ্য মহিলা।
আরও পড়ুন খুলছে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের দ্বার