পূর্ব বর্ধমান : পূর্ব বর্ধমানের ‘কালভার্ট স্কুল’। করোনার জেরে স্কুল কলেজ বন্ধ। বাড়ছে স্কুল ছুটের সংখ্যা। অনেক শিশু পড়াশুনা থেকে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাদের শিক্ষার আঙিনায় আনতে মাঠের মধ্যেই পড়ানো শুরু করলেন প্রাথমিক শিক্ষক।
আরও পড়ুন : স্কুল খোলার দাবিতে পথ অবরোধ হাবড়া, জলপাইগুড়িতে
শুরুটা হয়েছিল গ্রামের রাস্তার কালভার্টে বসে বাচ্চা ছেলে মেয়েদের চকলেট দিতে গিয়ে। তারপর স্কুল উঠে এসেছে মাঠের মধ্যে। পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ ব্লকের গুঁইর গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক সন্দীপ প্রসন্ন চক্রবর্তী। তিনি বিকেল বেলায় পাশের আম্বা গ্রামে হাঁটতে যেতেন। পেশায় তিনি একজন প্রাইমারি শিক্ষক। তাই সেখানে খেলতে আসা বাচ্চাদের সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যান সন্দীপ। তাদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার অভ্যাস থেকে সরে আসছে ওই গ্রামের বাচ্চারা। গ্রামের কয়েকজন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীকে পড়াশুনার কথা বললে রাজিও হয়ে যায় তারা। সেই থেকে আম্বা গ্রামের রাস্তার উপর কালভার্টে বসে শুরু হয় ‘কালভার্ট স্কুল’।
শুরু করেছিলেন দুই জন ছাত্রকে নিয়ে। পরে ক্রমশই বাড়তে থাকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। ফলে কালভার্টে জায়গা না ধরলে ক্লাস সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের একটি মাঠে অবস্থিত বট গাছের নীচে। এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৫। শুধু প্রাইমারি নয়, সন্দীপের ক্লাসে যোগ দিয়েছে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরাও।
আরও পড়ুন : বর্ধমানের জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এবং সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী
আম্বা গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই ছোট কৃষক কিংবা দিনমজুর। স্কুল বন্ধ কিন্তু প্রাইভেট টিউটারের কাছে পড়তে যাওয়ার মত সামর্থ নেই অনেকের। সেইসব ছাত্রছাত্রীরা যাতে স্কুলছুট না হয়, সেকারণেই তাঁর এই উদ্যোগ বলে জানান সন্দীপ। তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। তাঁর বাড়ি থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে খন্ডঘোষ ব্লকের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁর এই ‘কালভার্ট স্কুলের’ কথা স্কুলের শিক্ষকরা জানাতে পেরে তাঁরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। কেউ মাস্ক, কেউ স্যানিটাইজার, কেউ চকলেট আবার কেউ পঠন পাঠনের সরঞ্জাম পাঠিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের জন্য।
সন্দীপের মহৎ এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন ওই স্কুলের আরও এক শিক্ষক অরিন্দম পাঁজা। শুধু আম্বা গ্রামে নয়, তার পাশের গ্রাম গুঁইর গ্রামের ছাত্রছাত্রীরাও আসছেন এই কালভার্ট স্কুলে। গুঁইর ও আম্বা গ্রামের বাসিন্দারা মাষ্টারমশাইয়ের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সন্দীপ জানান, ‘মূলত পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবে অনেকেই আসছেন, সবাইকে স্বাগত। সকলকে মাস্ক পরিয়ে, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস চলছে।’