বক্সা: শনিবার সন্ধেয় বক্সার জঙ্গলে দেখা মিলল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের (Royal Bengal Tiger)। ঘটনায় উচ্ছ্বসিত বন দফতরসহ সমগ্র ডুয়ার্স। দীর্ঘদিন ধরে বক্সায় (Buxa Tiger Reserve) বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে কি না তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। অবশেষে দীর্ঘ বিতর্কের অবসান ঘটল। কমপক্ষে পঁয়ত্রিশ বছর পর বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে দেখা মিলল রয়্যাল বেঙ্গলের।
বক্সা টাইগার রিজার্ভে নেই কোনও বাঘ, এই দুর্নাম মুক্ত করতে রাজ্য বন দফতর অসম থেকে পাঁচটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে আসার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ বিষয়ে অসম ও রাজ্যের সঙ্গে পাকাপাকি কথাও হয়েছিল। কিন্তু করোনার সংক্রমণ যুক্ত বেশ কিছু কারণে এখনও সেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার জঙ্গলে আনা হয়নি। এর মধ্যেই শুক্রবার রাত বারোটার পর বক্সার গভীর জঙ্গলে বন দফতরের পাতা ক্যামেরায় ধরা পড়ল একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি।
শেষবার হলুদ ডোরাকাটা ‘বাঘমামা’র দেখা পাওয়া গিয়েছিল ১৯৯৮ সালে। এরপর বক্সার জঙ্গল থেকে যেন হারিয়ে গিয়েছিল বাঘের অস্তিত্ব। জঙ্গলে বাঘ নেই বলে একটা অপবাদ ছিল। নামে বক্সা টাইগার রিজার্ভ, কিন্তু নেই কোনও বাঘ। সেই শাপমুক্তি হল এবার।
সম্প্রতি বক্সা টাইগার রিজার্ভ জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলতেই হইচই পড়ে গিয়েছে বন দফতরের অন্দরে, ইতিমধ্যেই সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ঘুরে বেড়াচ্ছে। একদিকে যেমন অনেকেই খুশি, তেমনই বনসংলগ্ন এলাকার মানুষজন আতঙ্কিত। বক্সা টাইগার রিজার্ভ কর্তৃপক্ষের তরফে নিরাপত্তার জন্য এখনও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সেই ছবির সঠিক স্থান এবং সময় জানানো হয়নি। তবে, বাঘটি বক্সার কোর এলাকায় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পঁয়ত্রিশ বছর পর বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে দেখা মিলল রয়্যাল বেঙ্গলের ছবি দেখাচ্ছেন বন দফতরের আধিকারিক
আরও পড়ুন – জলপাইগুড়িতে প্যাঙ্গোলিনের চামড়া উদ্ধার, ধৃত ২
বেশ কিছুদিন থেকেই বন দফতরের ক্যামেরায় ব্ল্যাক প্যান্থার, বনকুকুরের ছবি ধরা পড়েছে, বক্সার জঙ্গলে মিলেছে ভাল্লুকও। এবার বক্সা টাইগার রিজার্ভে বাঘের দেখা মিলতেই উচ্ছ্বসিত বক্সার বনকর্তা থেকে শুরু করে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বনমন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্য বন দফতরের জন্য বিরাট খবর, এতদিন ধরে বক্সার জঙ্গলে বাঘ নেই বলে যে কলঙ্ক ছিল, রয়্যাল বেঙ্গলের ছবি দেখার পর সেই কলঙ্কমুক্ত হল’।
উচ্ছ্বসিত এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন উৎসুক পর্যটকরা। রবিবার সকাল থেকেই রাজাভাতখাওয়া এলাকায় পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। দীর্ঘ করোনাকালের পর মুখ থুবড়ে পড়া ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসা ফের মাথা তুলে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী এলাকার বাসিন্দারা।
এদিন বিকেলে বক্সার চিফ কনজারভেটর অফ ফরেস্ট বুদ্ধরাজ স্বেওয়া বলেন, আগামী ৫ দিনের জন্য বক্সার জঙ্গল সাফারি নিষিদ্ধ। বাঘের খোঁজে ইতিমধ্যেই জঙ্গলে ১৫০টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। বাঘের খোঁজ মেলায় জলদাপাড়া অভয়ারণ্য থেকে আরো ৭০টি ক্যামেরা আনা হবে। বাঘের উপর নজরদারির জন্য বক্সা ইস্ট ও ওয়েস্ট মাইল আধিকারিকদের নিয়ে ৪ জনের ২টি মনিটরিং টিম তৈরি করা হয়েছে।