কলকাতা টিভি ডিজিটাল ডেস্ক: কোটরে ঢোকা দু-চোখে একরাশ উৎকণ্ঠা! উত্তরীয়র মতো করে গলায় ঝোলানো গামছা। বিধ্বস্ত চেহারা আড়াল হয় না পরনের গাঢ় নীল চেক শার্টে। চারপাশে যতদূর চোখ যায় ধু-ধু মাঠ। বলা ভাল, চাষজমি। আর কোনও জনমানব চোখে পড়ে না। ভুল হল, আছে আরও একজন।নিউটন। ভাসান শেখের ছায়াসঙ্গী।
ভাসান শেখ নামটা অপরিচিত। কিন্তু, রামপুরহাটের (Rampurhat violence) বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ খুনের ঘটনায় বারবার সামনে এসেছে নিউটনের নাম। নিউটনের কথা এখানে নয়। বরং, আমরা শুনি রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের হিংসা নিয়ে কী বলছেন ভাসান শেখ।
তার আগে, এককথায় পরিচয় দেওয়া যাক ভাসানের। বগটুই গ্রামে (Rampurhat Clash) একই পরিবারের যে আট জনকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের একজন ভাসান শেখের মা মীনা বিবি। বাকিরাও ভাসানের নিকট আত্মীয়। কাকিমা, পিসি, ভাগ্না-ভাগ্নী…। ফলে, কী মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন বীরভূমের এই যুবক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তার উপর তিন মাস হল ঘরছাড়া এই যুবক। কেন ঘরছাড়া? ভাসান শেখ বলার আগেই পাশ থেকে নিউটন বলে দেন, ‘বল, লালনের হুমকি…’ কে এই লালন? ভাদু শেখের লোক। ভাসানের মা-সহ আট জনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত।
আরও পড়ুন:Rampurhat Clash: রামপুরহাট-কাণ্ডে এনআইএ তদন্তের অনুরোধ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি শুভেন্দুর
ভাসান শেখের অভিযোগ, মা মীনা বিবিকে পুড়িয়ে মারার আগে (Birbhum Rampurhat Fire Death) ওরা ছুট করিয়েছে। হাতে ছিল কুড়ুল। ঘুরে ঢুকে মাকে হাঁফাতে দেখলে, ভাগ্নারা জল বাড়িয়ে দেয়। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা ঘরে ঢোকে। এলোপাথাড়ি কোপায়। সকলের গায়ে কেরোসিন-পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এই ‘ওরা’ কারা? ভাসান বললেন, ‘ভাদু শেখের লোকজন। লালন, মুর্তেজ, মনির, জাহাঙ্গীর, খুশির, বাপ্পা…।’
এতক্ষণ যা বলা হল, পুরোটাই ভাসান শেখের বয়ান। বয়ানের সত্যমিথ্যে তদন্তকারী এবং আদালতের বিচার্য। কিন্তু, তাঁর বয়ানে অসংগতিও আছে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তিনি নিজেই বলছেন তিন মাস হল তিনি ঘরছাড়া। তা হলে, ঘটনার কথা জানলেন কী ভাবে? কী ভাবেই বা জানলেন ভাদু শেখের দলবল এসে সকলকে পুড়িয়ে মেরে গেল। তা-ও আবার সকলের নাম ধরে ধরে। যদিও বগটুই গ্রামের গণহত্যায় পুলিস এখনও পর্যন্ত যে ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে, তাদের মধ্যে ভাসানের উল্লেখ করা একজনও নেই।
আরও পড়ুন: Covid 19: দূরত্ব-মাস্ক রেখে বাকি সব করোনা বিধি তুলতে কেন্দ্রের চিঠি
আক্ষেপ– মায়ের দেহ দাফন করতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘কী করে মায়ের দেহ কবর দেব! চোখেই দেখলাম না! আমি তো ঘরছাড়া। সৎকার দূর অস্ত!’ তবে, শুনেছেন, পরিবারেরই কোনও সদস্যের উপস্থিতিতে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
কবে ফিরবেন, আদৌ ফিরতে পারবেন কি না, এমন অসংখ্য প্রশ্ন তাঁকে তারিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিবার-পরিজন হারিয়ে ভাসান শেখের আর্তি একটাই, যারা অন্যায় করেছে, যারা খুন করেছে, তাদের শাস্তি। তিনি চান ঘরে ফিরতে।
এই দোলাচলে, উদ্বেগভরা মুখে ফের হারিয়ে গেলেন ভাসান! ধু-ধু প্রান্তরে। গোপন আশ্রয়ের আপাত নিরাপদ ঠিকানায়।