নদিয়া: শান্তিপুর টাউনশিপ পঞ্চায়েতের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ ক্লাবের দুর্গাপুজো এবছর সুবর্ণ জয়ন্তী। ৫০ বছরের দীর্ঘ পথচলার স্মৃতিকে ধারণ করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ এবারের পুজো উদ্বোধনের ভার তুলে দিলেন সেই সমস্ত মায়েদের হাতে, যাদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এই পুজোর যাত্রা। আজ থেকে অর্ধশতাব্দী আগে তাঁরা ছিলেন তরুণী গৃহবধূ, কারও বয়স ছিল ২০ কিংবা ২৫, আবার অনেকেই ছিলেন কিশোরী। তাদের উদ্যোগেই গড়ে উঠেছিল এই পূজা। আজ তারা প্রবীণ, অনেকেই ৬০ পেরিয়ে গেছেন। সেই সমস্ত প্রবীণদের সংবর্ধনা জানিয়ে তাদের হাত ধরেই আজ শুরু হল শান্তিপুর টাউনশিপের বিদ্যাপীঠ ক্লাবের ৫০ তম দুর্গাপূজা।
ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীকে আমন্ত্রণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তাদের মতে, পুজোর আসর কোনো রাজনৈতিক দলাদলির ক্ষেত্র নয়। একজন নেতাকে ডাকা হলে অন্য কেউ বঞ্চিত বোধ করেন, আর তাতেই সৃষ্টি হয় বিভাজন। তাই রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের প্রকৃত পথপ্রদর্শক, অর্থাৎ সেই সমস্ত মায়েদের হাতেই উদ্বোধন করানো হয়েছে এবারের পুজো। ফলে উদ্বোধনী মঞ্চে আবেগ, স্মৃতি আর সম্মানের মেলবন্ধনে ভরে ওঠে পরিবেশ।
আরও পড়ুন: গড়পাড়া বিধান স্মৃতি সংঘের এবারের দুর্গাপুজোর থিম কী জানেন?
এবারের থিম “ইচ্ছে ডানা”। এই থিমের মধ্যে দিয়ে সমাজে এক বিশেষ বার্তা পৌঁছে দিতে চায় ক্লাব। মূল বার্তা, পাখিদের সংরক্ষণ। সেই অনুযায়ী প্যান্ডেলের ভিতর তৈরি করা হয়েছে পাখিদের উপযুক্ত পরিবেশ। দেখা যাবে মাটির হাঁড়ি, কলসি, গাছের ডাল, এমনকি মাছ ভরা জলাশয়, যা পাখিদের প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎস। গোটা প্যান্ডেল জুড়ে যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে এক পরিবেশবান্ধব আবহ। প্রতিমা নির্মাণেও থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে।
৫০ বছরের ইতিহাসের এই সোনালী অধ্যায়কে স্মরণীয় করে রাখতে নানা সামাজিক উদ্যোগও গ্রহণ করেছে বিদ্যাপীঠ ক্লাব। ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তরফে যে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন, তা দিয়ে কেবল পুজোর খরচ নয়, একাধিক মানবিক কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুস্থদের বস্ত্র বিতরণ, মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন, এবং ছাত্রছাত্রীদের জন্য বই-খাতা বিতরণ।
পুজোর চারদিনই মণ্ডপে থাকবে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উদ্বোধনের পর থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য মণ্ডপ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের দিনেই কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেছেন থিমপুজোর এই অভিনব পরিবেশে। দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন, প্রবীণ মায়েদের সংবর্ধনা দিয়ে যে সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
দেখুন খবর: