কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: বিজেপির নতুন জেলা কমিটির তালিকা প্রকাশ হতেই জেলায় জেলায় বাদ পড়া সদস্যদের বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে। ঝাড়গ্রামে বিজেপির জেলা পার্টি অফিসে তালা লাগানোর জেরে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। বুধবার বিজেপির জেলা কমিটির তরফে পূর্ণাঙ্গ তালিকা ঘোষণা এবং জেলা সভাপতি বদলের পর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয় জেলা পার্টি অফিসে। বুধবার রাত থেকেই শুরু হয় গণ্ডগোল। এর পর বৃহস্পতিবার সকালে ঝাড়গ্রাম জেলা পার্টি অফিসে তালা লাগিয়ে দেয় কর্মীরা। নতুন কমিটির সহ সভাপতিদের পার্টি অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। দলের ফ্লেক্স টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়। সব শেষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় পার্টি অফিসে। বৃহস্পতিবার সকলে এই নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঝামেলা চলার পর ঘটনাস্থলে আসেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি সুখময় সতপথী। তিনি আসার পরই পার্টি অফিসের তালা খোলা হয়। সুখময় সতপথী বলেন,’ বিজেপির পার্টি অফিসে তালা লাগানো নতুন ঘটনা নয়। তৃণমূল পার্টি অফিসে তালা লাগায়নি। কিছু কর্মী তালা লাগিয়ে ছিল। আবার খোলা হয়েছে।’
বিজেপির জেলা সভাপতি বদলের পরেই জেলার ৫ বিধায়ক জাতীয় দলের সর্ব ভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে সভাপতি বদলের জন্য চিঠি দেন। তার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে আবার বিতর্ক শুরু হয়েছে। গতকাল বিকেলে জেলা কমিটির পূর্নাঙ্গ তালিকা বের হয়। তাতে বেশ কিছু পুরনো নেতৃত্বকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বুধবার ঝাড়গ্রামের বিজেপির কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে গেওয়া হয়। সেদিন পুরনো অফিস থেকে জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হলে বৃহস্পতিবার সকালে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে চলে আসা বিজেপির দলীয় কার্যালয় খালি করতে দেখা যায়। এই কার্যালয় যার বাড়িতে, সেই সুভাষ মাহাতো রাজ্যের ওবিসি মোর্চার জেলা সেক্রেটারি ও পরে রাজ্যের ওবিসি মোর্চার সহ সভাপতি হন।
সুভাষ মাহাতোর দাবি, বুধবারের সাংবাদিক সম্মেলনের কোনও খবর তাঁকে দেওয়া হয়নি। জেলার অপর এক সহ সভাপতি বিনোদ তেওয়ারি এই সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন না। নতুন তালিকাতেও জায়গা হয়নি তাঁর। আজ থেকে ওই শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিমটার এলাকার পুরোনো অফিস থেকে দলীয় কাজ চালানো হবে।
তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনাকে কটাক্ষ করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিধানসভা ভোটের রেজাল্ট বের হবার পর ওই দলের আর কিছু নেই। তৃতীয়বার সরকার গঠন করার পর মানুষ আর ওদের সঙ্গে নেই। জেলার ৬জন বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর তারা কোনও কাজ করতে পারছে না। মানুষ বুঝতে পেরেছে যে ওদের ভোট দেওয়া ভুল হয়েছে। তাই এই জেলার বিজেপির আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। বিজেপি জেলা সভাপতি বিবেক রাঙা বলেন, ‘এই অফিসের বদলের সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল। ওই অফিস খালি করে আমাদের পুরনো অফিসেই কাজ শুরু হবে।’
বিজেপির তরফে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর এই দুই সাংগঠনিক জেলার জেলা কমিটির তালিকা ঘোষণা করা হয়। সেখান থেকে বাদ পড়েন জেলা কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী। বাদ পড়া সদস্য ও পদাধিকারীদের অধিকাংশের দাবি, নিজের পছন্দের লোক না হওয়ার জন্যই তাঁদের জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিজেপি বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার কমিটি থেকে জেলার সহ সভাপতি রূপা চক্রবর্তীর নাম বাদ পড়ায় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। যদিও দুই সাংগঠনিক জেলায় নতুন জেলা কমিটি নিয়ে নেতা কর্মীদের ক্ষোভের কথা মানতে চাননি দুই জেলার সভাপতি।
জলপাইগুড়িতেও বিজেপি জেলা কমিটি থেকে দীর্ঘদিনের পুরনো নেতা অলোক চক্রবর্তীকে বাদ দিল দল। তিনি জেলা বিজেপির সহ সভাপতি ছিলেন। মোট সাতজন নেতাকে জেলা কমিটি থেকে বাদ দিয়ে ২৩ জনের কমিটি করা হয়েছে। জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হল বিজেপি যুব মোর্চার প্রাক্তন সভাপতি শ্যাম প্রসাদকে। দল থেকে বাদ পড়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অলোক। যদিও শ্যাম জানিয়েছেন, দলের নতুন-পুরনো সব নেতাকে সঙ্গে নিয়ে পুরভোটে লড়াই চলছে। ক্ষোভ উগরে দিয়ে অলোক বলেন, দলকে ব্যবহার ও বিক্রি করে সম্পত্তি বানানোর প্রতিবাদ আগেো করেছি, আগামীতেও করব। এদিকে, বিজেপি জেলা সম্পাদকের নতুন দায়িত্ব পেয়ে শ্যাম বলেন, অলোকবাবু ও জয়ন্তবাবুকে সঠিক জায়গা দেবে দল। আমাদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই।