বিষ্ণুপুর: টেন্ডার দুর্নীতি কান্ডে প্রাক্তন বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রীজ করতে পদক্ষেপ নিল বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। বিষ্ণুপুর পুরসভার একাধিক প্রকল্পের টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগে রবিবার সকালে গ্রেফতার হন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জারি রেখেছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা।
জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। টেন্ডার নিয়ে কোটি কোটি টাকার আর্থিক তছরূপের তদন্তে নেমে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, জমি জায়গা সহ একাধিক সম্পত্তি কিনেছেন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। সেই সম্পত্তির লেনদেন ও অর্থের উৎস জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী দল। পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে তদন্তকারী পুলিশ। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সেই সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রীজ করার তোড়জোড় শুরু করেছে পুলিশ। এর পাশাপাশি তাঁর পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করারও প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির টাকা রয়েছে তাঁর একেবারেই ঘনিষ্টজনের কাছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি তাঁদের অ্যাকাউন্টের তথ্য জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারী দল। বিষ্ণুপুর পুরসভাকে কেন্দ্র করেই উঠেছে টেন্ডার দুর্নীতির অভিযোগ। বিষ্ণুপুর পুরসভার আধিকারিকদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে টেন্ডার দুর্নীতি সংক্রান্ত পুর্নাঙ্গ বিষয় জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। সূত্রের খবর, ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনের প্রার্থী হলফনামায় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির দেওয়া সম্পত্তির হিসেব জানতে চাওয়া হবে হলফনামা রিপোর্টে।
আরও পড়ুন: রেল-সড়ক-বন্দর-বিদ্যুৎ-স্টেডিয়াম বেচে ৬ লক্ষ কোটি টাকা তুলতে চাইছে কেন্দ্র
২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জি। ২০১১ সালে বিষ্ণুপুর বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হয়ে পরিবর্তনের সরকারের আবাসন বিভাগের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। পরে আবাসন দফতর থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী হিসাবে। ফের ওই দফতর থেকে সরিয়ে বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে। একদিকে মন্ত্রী অন্যদিকে বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর বিধানসভা থেকে হেরে যান তিনি৷ বিষ্ণুপুর পুরসভার দায়িত্বে বহাল থেকে যান তিনি। ২০২০ সালে পুরসভার মেয়াদ শেষ হবার পরেও তিনি বিষ্ণুপুর পুরসভার পুর প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্ব গ্রহন করেন। ২০২০ সালে নভেম্বর মাসে পুরসভার পুর প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে। ২০২০ র ডিসেম্বর মাসে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি যোগ দেন বিজেপিতে।
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মীদের ক্যাডার করতে চাইছে তৃণমূল, WBCS প্রশ্ন বিতর্কে মন্তব্য দিলীপের
সূত্রের খবর, বিষ্ণুপুর পুরসভার মোট ৫৫ টি সরকারি প্রকল্পে আর্থিক বেনিয়মের হদিশ মিলেছে। আর্থিক তছরুপের পরিমাণ প্রায় দশ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। এরপরই তৎকালীন পুরপ্রধান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বিরুদ্ধে বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে প্রশাসন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণা, ৪০৬ ধারায় বিশ্বাসভঙ্গ ও ৪০৯ ধারায় পদে থেকে সরকারি অর্থ তছরুপের মামলা সহ একাধিক মামলা রজু করে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন: কলকাতায় আংশিক মেঘলা আকাশ, উত্তরবঙ্গে বাড়বে বৃষ্টি