বেনাশুলি: কারও বিদ্যুতের বিল ৪০ হাজার টাকা। কারও আবার দেড় লক্ষ। এমন ভূতুড়ে বিল দেখে কার্যত মাথায় হাত পড়েছে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর। কী করবেন বুঝতে পারছেন না মেদিনীপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বেনাশুলি গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা।
জঙ্গলের খাস জমিতে বিভিন্ন রকম ছোটখাটো বাড়ি তৈরি করে বসবাস করেন তাঁরা। জঙ্গলে কাঠ পাতা বিক্রি করে সংসার চলে গ্রামের ওই তিনশোটি পরিবারের। গত এক মাসে তাঁদের হাতে এমন মোটা অঙ্কের বিদ্যুৎ বিল ধরিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। বলা হয়েছে, মাওবাদ পর্ব থেকে লকডাউন শেষ পর্যন্ত দীর্ঘসময়ের বাকি থাকা এই বিল তাঁদের মেটাতে হবে।
কিন্তু কেন এত টাকা বিদ্যুতের বিল?
খোঁজ নিতেই জানা গেল, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মাওবাদ সমস্যার সময় অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন। সরকারি পরিষেবা, অফিস, যাতায়াত সবই বন্ধ ছিল। এমনই একটি মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা মেদিনীপুর সদর ব্লকের জঙ্গলে ঘেরা এই বেনাশুলি গ্রাম। বাম আমলে এই সমস্ত খাসজমিতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের বিপিএল তালিকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই আবার নিজেরাও সংযোগ নিয়েছিলেন পরে। সেই সময় কাউকেই বিদ্যুতের বিল দিতে হয়নি।
এরপর ২০০৯ সাল থেকে মাওবাদী সমস্যার শুরু হলে এই এলাকার বহু মানুষ হামলার আশঙ্কায় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন। কিছু লোক থাকলেও তাঁদের কাছে বিদ্যুৎ বিল বা সরকারি কোন কর্মী কেউই যায়নি। পাননি কোনও সরকারি পরিষেবাও। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাসিন্দারা ফিরে আসেন ওই এলাকায়।
এরপর বিদ্যুৎ দফতর ধীরে ধীরে ওই এলাকাগুলিতে প্রবেশ করে। বিদ্যুতের হিসাব নেওয়া শুরু করে। স্থানীয়রা জানান, ২০১৬ -১৭ থেকে পুরনো বিল দেওয়ার জন্য জানিয়ে গিয়েছিলেন তারা। তবে, তারপর আর কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এর পর করোনা ভাইরাস লকডাউন পর্ব শুরু হয়ে যায়। আবার অচলাবস্থা শুরু হয় জঙ্গলমহলে।
আরও পড়ুন- Mitali Express: কেন ভাড়া বেশি নিউ জলপাইগুড়ি-বাংলাদেশ মিতালী এক্সপ্রেসের?
সম্প্রতি সেই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতেই বেনাশুলী গ্রামের ওই বাসিন্দাদের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। যা দেখে মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের।স্থানীয় বাসিন্দা শেখ শরফুদ্দিন বলেন, ‘বাম আমলে আমরা না চাইতেও বিপিএল তালিকা ভুক্ত সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। জানানো হয়েছিল এটা অনুদান, এর বিল দিতে হবে না। মাওবাদী পর্বে অনেক বছর কোন বিদ্যুৎ বিলও আসেনি। কিন্তু এখন এক লাখ, দেড় লাখ, আশি হাজার এর মত মোটা মোটা বিল পাঠিয়ে দিয়েছে। খাস জায়গায় বসবাস করা শ্রমিক আমরা। সরকার পদক্ষেপ নিক, না হলে আমরা বিপদে পড়ে যাব, পারব না দিতে।’
এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সারাবাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতি। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাপস জানা বলেন, ‘পুরো বিষয়টায় গাফিলতি বিদ্যুৎ দফতরের। তারা সময়ে বিদ্যুৎ বিল আদায় করতে আসেনি। এখন মোটা টাকা আদায় করার চেষ্টা করছে। আমরা এটা নিয়ে আন্দোলনে নামব। এদের সমস্ত বিল মুকুব করার দাবি জানাব।’ বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষও।