বাঁকুড়া : ব্যক্তি এক, নাম অনেক, সবার আধার নম্বর আলাদা। এই ভাবেই ভুয়ো আধার ও ভোটার কার্ড বানিয়ে হাজার হাজার সিম কার্ড অ্যাক্টিভেশন রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশকে।। এই কারবারে জাল কতদূর ছড়িয়েছে, তাঁর খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
একই ব্যাক্তির ছবি ব্যবহার করে ভিন্ন নামে অসংখ্য আধার কার্ড। ঠিক এই ভাবেই বিভিন্ন ব্যাক্তিদের ছবিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মতন করে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড বানিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল জেলার একটি চক্র। গোপনে এই ভাবেই ভুয়ো আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড বানানো ছিল এই চক্রের মূল কাজ। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গোপনে এই চক্রটি কাজ করছিল। সিম কার্ড অ্যাক্টিভেশনের জন্য এরা ভুয়ো আধার কার্ড ও ভুয়ো ভোটার কার্ড বানাতো। এই সিমকার্ড গুলি দিয়ে ই-ওয়ালেট জালিয়াতির চক্র গজিয়ে উঠেছিল বাঁকুড়া জেলায়। ই-ওয়ালেট জালিয়াতি ও সিম জালিয়াতির তদন্তে নেমে দ্বিতীয় চক্রের মুল পান্ডা সব্যসাচী কুন্ডু রবিবার গ্রেফতার হয়েছে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে অসংখ্য ভুয়ো আধার কার্ড । উদ্ধার হওয়া আধার কার্ডে এক ব্যাক্তির ছবি দিয়ে একাধিক নামে তৈরি করা হয়েছে ভুয়ো আধার কার্ড।
আরও পড়ুন : ভুয়ো কিউ আর কোড বানিয়ে জালিয়াতি, বাঁকুড়ায় ই-ওয়ালেট জালিয়াতি কাণ্ডে নতুন মোড়
শুধু তাই নয়, সব্যসাচী নিজের ছবি এবং পরিবারের সদস্যদের ও অনান্য ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে মনগড়া নাম দিয়ে ভুয়ো আধার কার্ড গুলি বানাচ্ছিল বলে জানিয়েছে তদন্তকারীরা। ছাতনার খড়বনা গ্রামের রাস্তার ধারে বাবা অনন্ত কুন্ডুর চায়ের দোকান। আর নিজের ছিল একটি ট্রাক্টর। এই ছিল সব্যসাচীর পরিবারের উপার্জন। এটাই জানতেন এলাকার মানুষ। কিন্তু বাড়ির মধ্যে বসেই তাঁর এতোবড় মাপের জাল কারবার ঘুনাক্ষরে টের পায়নি প্রতিবেশীরা। তদন্তকারী পুলিশের দাবি, সব্যসাচী কুন্ডু নিজের বাড়িতে বসেই ভুয়ো তথ্য বানিয়ে বিভিন্ন সিম কার্ড ডিলারদের কাছ থেকে সিম সংগ্রহ করত। সেগুলি এক্টিভেশনের মধ্য দিয়ে নিজের কম্পিউটার থেকেই ই ওয়ালেট জালয়াতি ও কিউ আর কোড জালায়াতির কারবার চালাতো সব্যসাচী। তার বাড়ি থেকে ৫৭ টি কিউ আর কোড উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলি সব জাল বলেই দাবি তদন্তকারীদের। কিভাবে লেনদেন হতো তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন : হাজার হাজার ফেক সিম, ই-ওয়ালেট প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস বাঁকুড়ায়
সব্যসাচীর সঙ্গে যুক্ত ধৃত গঙ্গাজলঘাটির যুবক বাপি গরাই। বাপি সিম ডিলারের কাছে ভুয়ো নথির মাধ্যমে সিম সংগ্রহ করত। পুলিশ জানিয়েছে, সব্যসাচীর দলে আরও সিম ডিলার যুক্ত রয়েছে। তিন দিন আগে ছাতনার একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া ৯০ টি মোবাইল, যেগুলি সব্যসাচীর ছিল বলে দাবি করছে জেলা পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা। অভিষেক মণ্ডলের চক্র ধরা পড়ার পরে অপর চক্রের মাস্টামাইন্ড সব্যসাচী কুন্ডু প্রমাণ লোপাটের জন্য সেগুলি জলে ফেলে দিয়েছিল। ই ওয়ালেট জালিয়াতি ও সিম জালিয়াতির তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে উঠে আসছে একের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ঘটনার তদন্তে নেমে খোঁজ মিলেছে হাজার হাজার ভুয়ো নথি তৈরির কারবারের। সামনে এসেছে ভুয়ো কিউ আর কোড বানানোর চক্রের। তদন্ত জারি রয়েছে। দুটি পৃথক চক্রের জাল কতদূর বিস্তৃত তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। বাঁকুড়া পুলিশের ধারণা, জেলার গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে এই সব চক্র এবং ভিন রাজ্যের সঙ্গে যোগ রয়েছে তাদের। এই চক্রগুলির ঠিকানা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা।