কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মতুয়া ধর্ম মহামেলার সূচনা-মঞ্চে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মুখ খুললেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই মহামেলার সূচনা অনুষ্ঠানে প্রায় ১৬ মিনিট ভার্চুয়াল ভাষণ দেন মোদি। কিন্তু তাঁর মুখে একবারও সিএএ নিয়ে কোনও কথা শোনা গেল না। এব্যাপারে মতুয়াদের একটা অংশ হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। তবে অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর খুশি। তিনি বলেন, রাজ্যে সিএএ চালু হবেই। তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে হবে কেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তো আগেই বলে দিয়েছেন, সিএএ কার্যকর করা হবেই।
মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে থেকে এ রাজ্যের মতুয়া সম্প্রদায় তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে ফয়সালা দাবি করে আসছে। তখন ভোট প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। তারপর গত কয়েক বছরে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রের ক্ষমতায় বসেছে বিজেপি। সংসদে সিএএ এবং এনপিএ আইন পাশ হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই আইন কার্যকর করে উঠতে পারেনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তাবড় বিরোধী নেতারা সিএএ-র তীব্র বিরোধিতা করেন। দেশজুড়ে তুমুল আন্দোলন গড়ে ওঠে। দিল্লির শাহিনবাগ হয়ে ওঠে সিএএ বিরোধী আন্দোলনের পীঠস্থান। ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়-সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সেই আন্দোলন দমন করতে ব্যাপক দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে দেশে করোনা মহামারি দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেন, করোনা মিটলেই সিএএ চালু করা হবে।
আরও পড়ুন: UP English Paper Leaked: উত্তরপ্রদেশে বোর্ডের প্রশ্ন ফাঁস, ২৪ জেলায় বাতিল ইংরেজি পরীক্ষা
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় কিছুতেই সিএএ চালু করা যাবে না। মতুয়াদের নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ারও কোনও প্রশ্ন ওঠে না। কারণ, তাদের ভোটাধিকার রয়েছে।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি রাজ্যে যে ১৮টি আসন পায়, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল মতুয়া অধ্যুষিত। ২০২১ এর বিধানসভা ভোটেও বিজেপি মতুয়াদের ভাল ভোট পেয়েছে। এত সবের পরেও কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ চালু না করায় মতুয়ারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ক্ষোভ দেখা দেয় বনগাঁর বিজেপি সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের মধ্যেও। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনওরকমে শান্তনুকে ঠান্ডা করেন।
আরও পড়ুন: Gadkari Hydrogen Car: ‘হাইড্রোজন গাড়ি’তে সংসদে এলেন গডকরি, কিলোমিটারে খরচ মাত্র ২ টাকা!
এরই মধ্যে মতুয়া ধর্ম মহামেলায় প্রধানমন্ত্রীকে আনতে পেরে খুশি শান্তনু। সিএএ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে শান্তনু মুখ না খুললেও তাঁর অনুগামীরা দৃশ্যতেই হতাশ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববাসীর কাছে একটা পিছিয়ে পড়া সমাজকে তুলে ধরলেন। তাই বা কম কীসের?
রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, অনেকদিন ধরেই সিএএ-র কথা বলে বিজেপি মতুয়াদের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসানোর চেষ্টা করছে। ওরা বুঝতে পেরেছে, ওসব এখানে চালু করা যাবে না। তাই প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সিএএ নিয়ে মুখ খোলেননি।