মালদহ/জলপাইগুড়ি/শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় বাড়ছে অজানা জ্বরের (Mystery Fever) প্রকোপ৷ অভিযোগ, গত চারদিনে পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷ জ্বর, বমি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে বাড়ছে শিশু ভর্তির সংখ্যা৷ বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্ক ভুগছেন বাবা-মায়েরা৷ যদিও স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কোনও শিশুর মৃত্যু হয়নি৷ এই সময় এমন জ্বর হয়৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর এই সময় ভাইরাল জ্বর হয়েই থাকে৷ তবে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে সেটা উদ্বেগের৷
প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা মনে করছেন ঋতু পরিবর্তনের কারণে এই জ্বর হয়ে থাকতে পারে৷ কিন্তু জ্বরের কারণ খুঁজতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে (Malda Medical College) একটি মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হয়েছে৷ তবে শিশু বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জ্বর নিয়ে আসা শিশুদের কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি৷ অপরদিকে জ্বরের কারণ খুঁজতে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে উত্তরবঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের নাকের রস ও রক্তের নমুনা কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো শুরু হয়েছে৷ কিন্তু হাসপাতালে যেভাবে শিশুদের চিকিৎসা হচ্ছে তা নিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন বাবা-মায়েরা৷ মালদহ মেডিক্যাল কলেজে আসা এক অভিভাবকের কথায়, এখানে কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না৷
আরও পড়ুন: ডিজিটাল হেলথ কোর্স চালু করছে রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
একই অভিযোগ শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের বিরুদ্ধে৷ সেখানে পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা মাত্র ৩৪টি৷ অথচ আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৭৪ জন শিশু৷ পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে মায়েরা তাদের সন্তানদের নিয়ে মেঝেয় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন৷ শয্যা সঙ্কট মেটাতে হাসপাতালের করিডরগুলো আলাদা শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ প্রতিদিন জ্বর, সর্দি, কাশি, বমি-সহ অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে গড়ে প্রায় ৩০০ জন মায়েরা তাদের সন্তানদের চিকিৎসা করাতে ছুটে আসছেন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে৷
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ৷ বৃহস্পতিবার৷ নিজস্ব চিত্র৷
তবে চিকিৎসা সংক্রান্ত যে অভিযোগ উঠেছে তা ঠিক নয় বলেই জানিয়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ৷ জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে৷ তবে এখনও পর্যন্ত কোনও শিশুর শরীরে করোনা ভাইরাস খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ এছাড়া জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের মাতৃমা বিভাগের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হচ্ছে৷ আলাদা করে করোনা ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে৷ সেখানে করা হয়েছে অক্সিজেনের ব্যবস্থা৷
আরও পড়ুন: দিল্লিতে নাবালিকা পাচার করতে গিয়ে পুলিশের জালে গ্রেফতার ১
অপরদিকে জলপাইগুড়িতে বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ৷ পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না চলে যায় সেজন্য বৃহস্পতিবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর, পূর্ত দফতর ও জেলা প্রশাসন বৈঠকে বসে৷ বৈঠকের পর জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘শিশুদের চিকিৎসায় কোনও খামতি রাখা হবে না৷ দ্রুত সদর হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা প্রস্তুত৷ অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে আধুনিক শয্যা ও যন্ত্রাংশ দিয়ে চালু হবে এই বিভাগ৷’ তবে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে৷ জেলাশাসক জানান, এই মুহূর্তে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ১০৫ জন শিশু৷ এদিন ৩২ জন শিশু ভর্তি হয়েছে আর ৩১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে৷ জোর দেওয়া হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়৷