মালদহ: সড়কপথে মালদহ থেকে কলকাতার দুরত্ব ৩৪৫ কিমি৷ মালদহ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে সাত বছরের মরণাপন্ন ছেলেকে নিয়ে তার বাবা-মা যখন ২২০ কিমি পথ পেরিয়ে কৃষ্ণনগর পৌঁছল তখন আর ১১৫ কিমি পথ যাওয়া বাকি৷ ঘন ঘন মোবাইলের ঘড়ির দিকে চোখ চলে যাচ্ছিল সাজমুলের৷ ছেলেকে নিয়ে যেতে হবে কলকাতার পিজিতে৷ আরও আড়াই ঘণ্টার রাস্তা..৷ মনে মনে ভাবছিলেন, এই আড়াই ঘণ্টার যাত্রার ধকল ছেলেটা সহ্য করে নিক৷ তার পর পিজির চিকিৎসকদের চিকিৎসায় সেরে উঠবে সাকিবুল৷ কিন্তু ছেলেকে নিয়ে পিজি যাওয়া হল না সাজমুলের৷ দীর্ঘ অবরোধে কৃষ্ণনগরে আটকে থাকে তাদের অ্যাম্বুল্যান্স৷ ওই অ্যাম্বুল্যান্সেই ছটফট করতে করতে ‘ইন্তেকাল’ হয়ে যায় সাত বছরের সাকিবুলের৷
আরও পড়ুন: কৃষ্ণনগরে অবরোধে শিশু মৃত্যু, গ্রেফতার ৫
ওই সময় চোখের সামনে ছেলেকে ছটফট করে মরতে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না সাজমুলের৷ অবরোধের জেরে গাড়ি আটকে পড়েছিল৷ সামনে-পিছনে বেরনোর কোনও জায়গা ছিল না৷ তখন বাধ্য হয়ে অবরোধকারীদের কাছে গিয়ে অনেকবার অ্যাম্বুল্যান্সটিকে ছেড়ে দেওয়ার অনুনয়-বিনয় করেন সাকিবুল৷ কিন্তু অভিযোগ, কেউ-ই তাঁর কথাকে পাত্তা দেয়নি৷ যার মাশুল দিতে হয় সাকিবুলকে৷ অ্যাম্বুল্যান্সেই মারা যায় সে৷ বুধবার গ্রামের বাড়ির বিছানায় শুয়ে শোকাতুর বাবার প্রশ্ন, ‘দু’ঘণ্টা ধরে অবরোধ কেন থাকবে? অবরোধ না থাকলে ছেলেটা বেঁচে যেত৷’
কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের মোথাবাড়ি থানার জোতঅনন্তপুর গ্রামে সাজমুলের বাড়ি৷ মঙ্গলবার ওই বাড়ির ছাদে খেলা করছিল সাকিবুল৷ খেলতে খেলতে তিনতলা থেকে পড়ে যায় সে৷ পিঠে, কোমরে, ঘাড়ে গুরুতর চোট লাগে৷ সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে৷ সেখান থেকে পাঠানো হয় মালদহ জেলা হাসপাতালে৷ কিন্তু সাকিবুলের শারীরিক অবস্থার এতটাই অবনতি হয় যে চিকিৎসকরা ছেলেকে নিয়ে কলকাতার পিজিতে চলে যেতে বলেন সাজমুলকে৷
আরও পড়ুন: পাগলা কুকুরের কামড়ে এক দিনেই জখম ৩৮
চিকিৎসকদের কথা শুনে সময় নষ্ট না করে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন সাজমুল৷ মুমূর্ষু ছেলেকে নিয়ে প্রায় কলকাতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু কে জানত কৃষ্ণনগরের পর আর এগোবেই না অ্যাম্বুল্যান্সের চাকা! সাজমুল বলেন, ‘পুরো রাস্তা ঠিকই ছিল৷ কিন্তু ওখানে জ্যাম ছিল৷ জ্বালা সহ্য করতে না পেরে জান চলে যায় ছেলেটির৷’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই সময় অবরোধের জেরে আরও তিনটে অ্যাম্বুল্যান্স আটকে পড়েছিল৷ ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলোতে রোগী ছিল৷ কিন্তু আমার ছেলের ইন্তেকাল হয়ে গেল৷’
সাজমুলের ছেলের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রতিবেশীরা৷ তাঁরা জানিয়েছেন, খুব অন্যায় হয়েছে৷ পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আবেদন, এভাবে যারা রাস্তা অবরোধ করেছিল তাদের যেন কড়া শাস্তি দেওয়া হয়৷ সোহেল রানা নামে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমাদের শুনে খারাপ লেগেছে৷ দোষীদের আইনত শাস্তি দিতে হবে৷ পরিবারকে সরকারি সাহায্যের দাবি জানাচ্ছি৷’