দুর্গাপুর : দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের কাছে অবস্থিত ভবানী মাতার মন্দির। এখানে মা কালী ভারতমাতা রূপে পূজিত হন। তাই তাঁর মন্ত্রেও আছে বন্দে মাতরমের উল্লেখ। কথিত আছে, বিপ্লবী এবং ডাকাত ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী এই মন্দিরে পুজো করে ডাকাতিতে বের হতেন। এখানে মা কালীর পুজোর মন্ত্র বিচিত্র।
ওম বন্দেমাতরম জয় জয় ভারতবর্ষম
ওম ঐক্যম স্মরণম গচ্ছামি
ওম সত্যম শরণম গচ্ছামি
ওম স্বরাজ্যম শরণম গচ্ছামি
এই মন্ত্রে মায়ের পুজো শুরু হয় এবং মায়ের আরতির পর যখন মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়। দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্রে সিটি সেন্টারে অম্বুজা নগরীতে রয়েছে এই প্রাচীন কালী মন্দির। কথিত আছে বাংলায় যখন পাল ও সেন যুগের শাসন ছিল এই মন্দির সেই সময়কার। পরবর্তীকালে বিপ্লবী দস্যু ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী মন্দিরের পিছনের জলাশয়ে স্নান সেরে এখানে পুজো করতেন, সাধনা করতেন এবং এখান থেকেই তাঁরা ডাকাতি করতে যেতেন। এরপর লুঠ করে আনা টাকা পয়সা গরিব মানুষদের মধ্যেই দান করতেন এবং বিপ্লবীদের সেই টাকা দিয়ে সাহায্য করতেন।
ধীরে ধীরে এই মন্দির হয়ে ওঠে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীদের আস্তানা। সুড়ঙ্গ পথে তাঁরা আসতেন এবং ভারতমাতা রূপে মায়ের পুজো করতেন। আবার সুড়ঙ্গ পথে ফিরে যেতেন। অম্বুজা নগরী যখন গড়ে ওঠে, তখন সেই সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়া গেছিল। চারিদিকে সুনসান জঙ্গলে ঘেরা এই এলাকা যখন মেশিন দিয়ে পরিষ্কার করে মাটি কাটা হচ্ছিল সেই সময় বেরিয়ে পড়ে সুরঙ্গ। এখন পুরসভা থেকে সেটাকে সংস্কার এবং সুরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। দুর্গাপুরে আরও একটি গুহা আবিষ্কৃত হয়। সেই গুহার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কথিত আছে, এই গুহা দামোদর নদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মন্দিরের প্রধান সেবাইত ছিলেন নন্দলাল চট্টোপাধ্যায়। সেই পরিবারের সদস্য মিলন চট্টোপাধ্যায় এখন এই মন্দিরের সেবাইত। ভবানী মন্দিরে কালী মায়ের পুজো কালীপুজোর দিন হয়না, হয় তার আগের দিন অর্থাৎ ভুত চতুর্দশীর দিন। এখনকার সেবাইত মিলন চট্টোপাধ্যায় জানান, একটা সময় মন্দিরের পেছনে যে এই বিশাল বড় দিঘী ছিল সেখান থেকে মাছ তুলে এনে মায়ের মাছের ভোগ রান্না করা হতো। এখন আর হয় না কারণ এই জলাশয়টি মজে গেছে। প্রতি বছর এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তের সমাগম হত। তাঁদের বসিয়ে ঠাকুরে ভোগ খাওয়ানো হত। কিন্তু করোনার কারণে এবছর তা আর হবে না। দুর্গাপুরের মানুষের মুখে মুখে আজও এই প্রাচীন কালী মন্দির নিয়ে ছড়িয়ে আছে নানান কাহিনী।