ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ব্লকের বড়খাঁকড়ি এলাকায় বেশিরভাগ মানুষই আদিবাসী ও মাহাত সম্প্রদায়ের। তাঁদের জীবিকা দিনমজুরি কিংবা জঙ্গল থেকে পাতা এনে থালা বানিয়ে বাজারে বিক্রি করা। নয়াগ্রামের ৬০ ভাগ জঙ্গল ৪০ ভাগ জনবসতি। শাল, মহুল, সেগুনের জঙ্গলই ওই এলাকার মানুষের বেঁচে থাকার সম্বল।
মাধ্যমিক ছাত্রী আশালতা সিংয়ের বাড়ি নয়াগ্রাম ব্লকের খাসজঙ্গল, এলাকায়। ওই এলাকার প্রায় ৫০ থেকে ৭০টি পরিবার মাহাত ও আদিবাসী ভূমিজ সম্প্রদায়ের। জঙ্গল থেকে শালপাতা বাড়িতে এনে তা দিয়ে থালা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই তাঁদের সংসার চলে। সরকারি সাহায্য বলতে পান রেশন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাঁদের একমাত্র ভরসা জঙ্গলের শালপাতা, শুকনো কাঠ।
এই জঙ্গলে রয়েছে হাতি ও অন্যান্য জন্তু-জানোয়ার। তাতে কি? সংসার চালাতে সেই ভয় উপেক্ষা করে জঙ্গলে যান এলাকার মানুষ। থালা তৈরি কিংবা দিনমজুরি করে কোনওরকমে সংসার চলে। কিন্তু দারিদ্র্যের জন্য ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই ওই এলাকায় মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছেলেমেয়ে নেই বললেই চলে।
নয়াগ্রাম ব্লকের গভর্নমেন্ট মডেল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী আশালতা এবার খুব কষ্টের সঙ্গে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। নয়াগ্রাম ব্লকের খাসজঙ্গল গ্রামের সিং পরিবারের ওই ছাত্রী জানায় বাড়িতে রয়েছেন মা, বাবা, দাদা ও বোন। ৫ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় বাবা- মাকে। তাই অর্থের অভাবে পড়াশুনা ছাড়তে হয় দাদা শ্যামসুন্দর সিংকে।
ওই এলাকায় সেচের ব্যবস্থা না থাকায় তেমন চাষবাস হয় না। সে জানায়, সকাল হলেই মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে যায় শালপাতা তুলতে। ওই পাতা বাড়িতে নিয়ে এসে রোদে শুকনো করে পাতার থালা তৈরি করা হয়। সেইসঙ্গে চলছে তার পড়াশুনা। আশালতা জানায়, সারাদিন বাড়ির কাজের ব্যস্ততার মধ্যে যখনই একটু সময় পায়, বই নিয়ে বসে।
আরও পড়ুন: Lemon Theft: চাহিদা তুঙ্গে, দাম আকাশছোঁয়া, উত্তরপ্রদেশে চুরি ১০০ কেজি পাতিলেবু
এইভাবেই চলছে ওই জঙ্গলখণ্ডের এক ছাত্রীর জীবন সংগ্রাম। আশালতার ইচ্ছা শিক্ষিকা হওয়ার। যতই কষ্ট হোক, সে তার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে বলে জানায়। তার কথায়, যদি কোনরকম সরকারি সাহায্য পায়, তাহলে হয়তো তার স্বপ্ন পূরণ করতে সুবিধা হবে। বড়খাঁকড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ভবেশচন্দ্র মাহাতো গ্রামবাসীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।