বালুরঘাট: কলকাতা টিভি ডিজিটালের খবরের জেরে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। শনিবারেই প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া হল ব্যবস্থা। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে (Guinness World Records) স্বীকৃতি পাওয়া দক্ষিণ দিনাজপুরের (South Dinajpur) বংশীহারি ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রামের সিদ্দিকা পারভিনের সঙ্গে দেখা করলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।
২০১৩ সালে পৃথিবীর একমাত্র অতিকায় মহিলা (Heaviest woman) হিসেবে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে (Guinness World Records) স্বীকৃতি পেয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের (South Dinajpur) বংশীহারি ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রামের সিদ্দিকা পারভিন। এক সময় তাঁকে নিয়ে হইচইয়ের সীমা ছিল না। বছর আটেক আগেও গ্রামের রাস্তার ধুলো উড়িয়ে শাসক এবং বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা সহায়তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিযোগিতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁর বাড়ি।
কিন্তু এখন সেসব শুধুই স্মৃতিমাত্র। বর্তমানে অসুস্থ সিদ্দিকার জীবন সংগ্রামে এখন আর কেউ পাশে নেই। এমনকী কীভাবে অতিকায় চলচ্ছক্তিহীন প্রায় অথর্ব তরুণীর দিন কাটছে, তার খোঁজও রাখেন না কেউ। আজ পর্যন্ত জোটেনি কোনও সরকারি ভাতা। হয়নি আধার কার্ড।
ভারতীয় অতিকায় তরুণী হিসেবে গিনেস বুকে স্থান পাওয়া সিদ্দিকা তো বটেই, তাঁর পরিবারও এব্যাপারে ক্ষুব্ধ। কেমন আছেন সিদ্দিকা! তাঁর খোঁজ নিতে গিয়ে সেই ক্ষোভের আঁচ মিলেছিল। সিদ্দিকা পারভিন তো তাঁর ছবি পর্যন্ত তুলতে দিতে নারাজ। আর তাঁর বাবা-মায়ের অভিযোগ, অনেকে তাঁদের মেয়ের ও পরিবারের ছবি তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু, মেয়ের বা তাঁদের কোনও হাল ফেরেনি। বরং অতিকায় মেয়েকে নিয়ে তাঁরা অতিকষ্টে দিনযাপন করছেন। অবহেলা, অপমানের থেকেও এখন নিস্তার নেই বিরল রোগে আক্রান্ত মেয়েটির।
পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমারের সমস্যায় ২৩ বছর বয়স থেকে সিদ্দিকার চেহারা দীর্ঘ হতে থাকে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তাঁর খাবারের চাহিদা। রোজ প্রায় দু’কেজি চালের ভাত খাওয়ার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় গরিব পরিবারটিকে। সিদ্দিকা এরপর ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক সময় নেতা, মন্ত্রীর সুপারিশে সিদ্দিকা চিকিৎসা করতে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন। তারপর আর খোঁজ রাখে না কেউ। এখনও সুস্থ নন। সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না।
আরও পড়ুন- নীরবে বিদায় স্বপন দে ওরফে শ্মশান স্বপনের
৩৩ পেরনো সিদ্দিকাকে নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় দিন কাটছিল দিনমজুর বাবা আফাজুদ্দিন ও মা মানসুরা বিবির। তাঁদের বক্তব্য, সরকার মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা তো করতে পারল না, এবার অন্তত একটি ভাতার ব্যবস্থা করে দিক। যাতে ভবিষ্যতে সিদ্দিকার অল্প হলেও নিশ্চিত সংস্থান থাকে। আর সেই দিনের পথ চেয়ে বসে রয়েছেন সিদ্দিকা ও তাঁর পরিবার। আর এই খবর প্রকাশিত হতেই সিদ্দিকার সঙ্গে এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করল প্রশাসন।