বাঁকুড়া: স্বামী মারা গিয়েছেন আগেই। দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান স্ত্রী। কিন্তু ‘পথের কাঁটা’ হয়েছিল পাঁচ সন্তান। তাই তাদের মোটা টাকার বিনিময়ে বেচে সেই টাকায় বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিল মা। বিক্রি হয়ে গেছিল শিশুরা। শিশু পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে এই তথ্য পেয়ে তাজ্জব পুলিশ।
আরও পড়ুন: চুক্তি সই নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সামনে সমর্থকদের বিক্ষোভ, পুলিশের লাঠিচার্জ
এই ঘটনায় গ্রেফতার এক স্কুলের অধ্যক্ষ কমলকুমার রাজোরিয়া, এক শিক্ষিকা সহ মোট ৮ জন। পুলিশ উদ্ধার করেছে ৫ শিশুকেই। ওই ৮ জনকে গ্রেফতার করে বড়সড় শিশুপাচার চক্রের সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া শিশুদের হোমে রাখা হয়েছে। বাঁকুড়ার কেন্দ্রীয় জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের কাছ থেকে দুই শিশুকন্যা ও শিক্ষিকার কাছ থেকে এক শিশুপুত্রকে পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, টাকার বদলে শিশুদের বিক্রি করে তাদের মা রিয়া বাদ্যকার।
আরও পড়ুন: ডেটলাইন কলকাতা একুশে জুলাই ১৯৯৩
জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষকে আদালতে পেশ করা হলে তদন্তের জন্য অধ্যক্ষ সহ তিন জনকে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় বাঁকুড়া জেলা আদালত। বাকিদের ১৪ দিনের জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। অধ্যক্ষকে জেরা করে খোঁজ মেলে এই চক্রে যুক্ত আরও এক জনের। সেই সূত্র ধরে মঙ্গলবার দুর্গাপুর মেনগেট এলাকার মুদির দোকানদার বিকাশ গুপ্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: বাংলার ‘হিংসা’ নিয়ে দিল্লির রাজঘাটে বিজেপি’র ধর্না
বিকাশ গুপ্তের সাথে কে কে রাজোরিয়ার সম্পর্কের যোগসূত্র খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী আধিকারিকরা। বাঁকুড়ার স্কুলের অধ্যক্ষের সঙ্গে দুর্গাপুরের দোকানদারের কীভাবে যোগাযোগ হল তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাঁদের ধারণা, নিয়মিত অধ্যক্ষের যাতায়াত ছিল এই দোকানে। বাঁকুড়া থেকে দুর্গাপুরের স্বপন দত্তের চায়ের দোকানে অধ্যক্ষের আসা যাওয়ার মূল কারণ খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী পুলিশ। উদ্ধার হওয়া পাঁচ শিশুর মা রিয়া বাদ্যকারকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্বপন দত্তের মাধ্যমেই রিয়া বাদ্যকারের সঙ্গে যোগাযোগ হয় অধ্যক্ষের। তবে বাচ্চারা রিয়ারই কিনা তা জানতে ডিএনএ টেস্ট করা হবে। রিয়ার সঙ্গে কথা বলেই মোটা টাকার বিনিময়ে নবোদয় বিদ্যালয়ের নিঃসন্তান শিক্ষিকার কাছে ন-মাসের সন্তান বিক্রি হয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, রিয়ার স্বামী মারা যান দেড় বছর আগে। দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে পথের কাঁটা হয়েছিল তাঁর পাঁচ সন্তান। সেই সন্তানদের বিক্রি করেই রিয়া নিশ্চিন্তে দ্বিতীয় বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিল। এদিকে অধ্যক্ষের কাছে থাকা রিয়ার দুই সন্তানকে রাজস্থান পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল স্কুলের অধ্যক্ষ, এমনটাই অনুমান পুলিশের।