বাঁকুড়া: বিরল রোগের অস্ত্রপচার করে অন্যন্য নজির গড়ল বাঁকুড়ার সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। দীর্ঘদিন থেকে ভুগতে থাকা এক রোগীকে অস্ত্রপচার করে তাঁর পেট থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের একটি টিউমার বের করলেন চিকিৎসকেরা।
সুস্থ হয়ে বাড়ির পথে ফিরলেন পুরুলিয়ার মদন রজক। পুরুলিয়ার মানবাজার এলাকার বাসিন্দা বছর ৫০ এর মদন রজক। পেশায় দিন মজুরির কাজ করতেন বর্ধমানে। মদন বাবুর কথায়, দীর্ঘ ২০ থেকে ২২ বছর ধরে পেটের ব্যাথা আর অম্বলের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করান এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো মেডিসিন ব্যবহার করেও রোগ থেকে মুক্তি পাননি বলেই জানান তিনি। তাঁর দাবি মাঝে মধ্যেই পেটের মধ্যে বলের মতো কিছু ঘোরাঘুরি করত। এই সমস্যাও তিনি বিভিন্ন চিকিৎসকদের জানিয়েও ছিলেন। কিন্তু হয়নি তাঁর রোগের সমস্যার সমাধান।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক নাকি অন্য কিছু, কুপার হাসপাতালে সিদ্ধার্থ শুক্লার ময়নাতদন্ত
অস্ত্রোপচার করে বের করা টিউমার
একই উপসর্গ নিয়ে জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা করান মদন বাবু। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগ কিনারা পাওয়ার চেষ্টা করেন সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা।
গত ৯ আগস্ট মদন বাবুকে ভর্তি করা হয় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বিভিন্ন পরীক্ষা করে সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা মদন বাবুর রোগ নির্নয় করেন। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসা ডা. শিব শংকর কুয়েরি বলেন, ‘’রোগের বিভিন্ন উপসর্গ এবং পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দেখেন পেটের মধ্যে বাস বেধে আছে এক বিশাল আকারের টিউমার ডাক্তারি ভাষায় এই রোগের নাম ‘পার্টিশনাল লুজ বডি।’’
রোগটিকে অত্যন্ত বিরল বলেই দাবি করেন চিকিৎসকেরা। তারপরেই সার্জারি, আনাস্থেসিয়া সহ মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয় হাসপাতালের তরফে। অস্ত্রোপচার করে রোগীর পেট থেকে টিউমার বের করার সিদ্ধান্ত নেয় চিকিৎসকদের দল। ২৫ অগাস্ট প্রায় দেড় ঘন্টার চেষ্টায় রোগীর পেট কেটে ১৫ সেমি . পাথরাকৃতি টিউমারটি সফলভাব বের করা হয়। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শিব শংকর কুয়েরী জানান, এই অস্ত্রোপচার ছিল অত্যন্ত জটিল। অস্ত্রোপচারের সময় খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছে। রোগী বহু বছর ধরে কষ্ট পাচ্ছিলেন। এবার সে সুস্থ তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দোরগোড়ায় কি তৃতীয় ঢেউ? দৈনিক সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বাড়ছে উদ্বেগ
বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. পার্থ প্রতিম প্রধান জানান, ‘’বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রচেষ্টার ফলেই এই সফলতা এসেছে। দীর্ঘ দু দশকের রোগ যন্ত্রনা থেকে রোগী মুক্তি পেয়েছেন। ‘’
দীর্ঘ বছরের রোগ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে খুশি রোগী ও রোগীর আত্মীয়রা। ভূয়সী প্রশংসাও করলেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের।