বারাসত: এক বৃদ্ধ রাস্তার ধারে বসে ফল বিক্রি করছেন। সেখানে সাজানো আছে কলা, পেয়ারা, তাল, নারকেল হরেকরকমের ফল। ক্রেতারা আসছেন, দরদাম করছেন, ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই দৃশ্য তো রোজই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে একটু আলাদা। যিনি ফল বিক্রি করছেন তাঁর পরিচয় শুনলে চমকে উঠতে হয়। ৫ বারের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য, ১ বার গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মশিয়ার রহমান। তিনি এখন বারাসতের ফুটপাতের ফল বিক্রেতা।
৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবন তাঁর। প্রথমবার ১৯৮৩ সালে কংগ্রেসকে পরাজিত করে সিপিআইএমের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এর পর ১৯৮৮, ১৯৯৩, ১৯৯৮ পর পর ৪ বার পঞ্চায়েত সদস্য সচিব নির্বাচিত হন তিনি। দলের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয় মশিয়ারবাবুর। ২০০৮ সালে নির্দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত খিলকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন মশিয়ারবাবু। মার্কসবাদে বিশ্বাসী মশিয়ার রহমানের কাছে সততাই মূল মতাদর্শ। নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ বাক্য পাঠ করে ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষতা, নিয়ম-কানুন ও আদর্শ মেনে চলবেন এই শপথ নিয়েছেন তিনি। সেই মতই কাটিয়েছেন সারাজীবন।
ফুটপাতে বসে ফল বিক্রি করছেন মশিয়ারবাবু
সদস্য থাকাকালীন একাধিক সুযোগ পেয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান করে দেওয়ার। কিন্তু সেই পথে হাঁটেননি মশিয়ার রহমান। পঞ্চায়েতের সদস্য থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কোনদিনও কোনও অসৎ সঙ্গকে প্রশ্রয় দেননি ও কাউকে আঘাত আক্রমণ করে কোনও কথা বলেননি। সে সময় পাওয়া পুরস্কার মূল্য ভাগ করে দিতেন দলীয় কর্মীদের মধ্যে। কখনও নিজের পরিবার বা নিজে আত্মসাতের কথা ভাবেননি তিনি। প্রধান হওয়ার সুযোগ থাকলেও ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে জোট থাকার কারণে তা কখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি মশিয়ারের।
আরও পড়ুন: ‘ঠিকঠাক হয়নি সেলাই’, প্রসূতির মৃত্যুকে ঘিরে ধুন্ধুমার বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে
বিশ্বাসী ছিলেন সহজ-সরল জীবনযাপনে। ভিটেবাড়ি বিক্রি করে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা নিজেদের মতন করে তাঁদের সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন। স্ত্রীকে নিয়ে মশিয়ার রহমান এখন বারাসতের ন-পাড়ায় থাকেন। সংসারে রয়েছে অভাব-অনটন। তাই সংসার চালাতে বারাসত থানার সামনে ফুটপাতে বসে ফল বিক্রি করছেন তিনি। কোনও দিন ১৫০ আবার কোনও দিন ২০০ টাকা আয় হয় তাঁর। ওষুধ কেনা থেকে খাওয়া-দাওয়া সমস্ত চালাতে হয় এর মধ্যেই। দল না ছাড়লেও দলের সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন মশিয়ার রহমান। খোঁজ নেন না বাম নেতারা। আর্থিক অনটনের কাছে হার মানলেও নিজের সততার কাছে হার মানেননি প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য মশিয়ার রহমান।
আরও পড়ুন: ভবানীপুরে প্রচারে নেই ‘বাবুল’, মিডিয়া জানে, দল জানে না, বললেন দিলীপ