চন্দননগর: পুরভোটে ব্যাপক সাফল্য পেলেও উপনির্বাচনে হার, দলের গোষ্ঠী কোন্দল ভাবাচ্ছে চন্দননগরের তৃণমূল নেতৃত্বকে। ২০১৫ সালের পুরভোটে ৩৩টা আসনের মধ্যে টিএমসি পায় ২৩টি, সিপিএম পায় ৯টি, বিজেপি ১টি আসনে জয়লাভ করেছিল। সেবারও রাম চক্রবর্তী হন মেয়র।
২০১৮ সালের ২৩ অগস্ট শেষ মেয়র-ইন-কাউন্সিলের মিটিং হয়। তাতে বোর্ডের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন এই বোর্ড নাগরিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। ২৪ তারিখ খারিজ হয়ে যায় চন্দননগর পুরবোর্ড। তৃণমূল কাউন্সিলরদের অন্তর্দ্বন্দ্বে দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ থানা-পুলিস পর্যন্ত গড়ায়। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একাধিকবার আলোচনা করেও দ্বন্দ্ব মেটাতে পারেনি। ফলে ২৩ জন কাউন্সিলর থাকা সত্ত্বেও বোর্ড ভেঙে যায়। খারিজ হয়ে যায় কাউন্সিলরদের পদ। পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডুকে বোর্ড প্রশাসক করা হয়।
মূলত মেয়র পারিষদদের সঙ্গে ডেপুটি মেয়র জয়ন্ত দাস, কাউন্সিলর জয়দেব সিংহ, অজয় ঘোষদের মতো ১৫ জন তৃণমূল কাউন্সিলর চিঠি দিয়ে দলকে জানান, রাম চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুরবোর্ড নাগরিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে দেওয়া হয় নজিরবিহীনভাবে।
ছয় মাসের জন্য স্বপন কুণ্ডুকে প্রশাসক করা হয়। ছয় মাস পর প্রশাসক বোর্ডে পাঁচ জনকে মনোনীত করা হয়। রাম চক্রবর্তীকে করা হয় চেয়ারম্যান। বিধায়ক-মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, মুন্না আগরওয়াল, অনিমেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পীযূষ বিশ্বাসকেও রাখা হয়। বাকি কাউন্সিলরদের পদ খারিজ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা নাগরিক পরিষেবা দিতে পারেন না। বিধানসভা নির্বাচনের পর ইন্দ্রনীল সেন বোর্ড থেকে সরে যাওয়ায় শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়কে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: Udaipur Murder: উদয়পুরের হত্যাকাণ্ডে পাক যোগ, দাবি রাজস্থান পুলিসের
প্রায় তিন বছর ধরে মনোনীত কয়েকজনকে নিয়ে কর্পোরেশন চলে। এরই মধ্যে গত লোকসভা ভোটে হুগলি লোকসভার বাকি বিধানসভার মতো চন্দননগরেও ব্যাপকভাবে জয়লাভ করে বিজেপি। সাংসদ হন লকেট চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্যের বাকি আসনের মতো চন্দননগরেও পুনরায় নির্বাচিত হন রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। পুরভোটে দায়িত্ব বর্তায় তাঁর উপর। কোনও হেভিওয়েট নেতৃত্ব ছাড়াই ৩৩টি আসনের মধ্যে ৩১টিতে জয় পায় তৃণমূল।
গত পুরভোটের আগে বিজেপি প্রার্থী গোকুলচন্দ্র দাস মারা যাওয়ায় ভোট স্থগিত ছিল ১৭ নং ওয়ার্ডে। কিন্তু ব্যাপক সাফল্যের কারণে উপনির্বাচনের দিনও জোর গলায় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছিল, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডও তাদেরই থাকবে। কিন্তু সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু হওয়ার পর বদলাতে থাকে চিত্রনাট্য। মোট তিন রাউন্ড গণনার শেষে ১৩০ ভোটে জয়ী হন সিপিএম প্রার্থী অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। তৃণমূল প্রার্থী সুজিতকুমার নাথকে হারিয়ে জয়ী হন তিনি। বিজেপি ৬৭, কংগ্রেস ৪৪টি ভোট পায়।
জয়ী দলের প্রবীণ নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র একটি টুইটে পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছেন, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে ১৭ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল একাই পেয়েছিল ৫৫.৭ শতাংশ। আর কংগ্রেস-সিপিএম জোট পেয়েছিল মাত্র ২৫.৪৯ শতাংশ। বিজেপি ১৭.৫৬। আর এবার তৃণমূল পেয়েছে ৪৪.০২ শতাংশ। অর্থাৎ, তৃণমূলের ভোট কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ।