বিষ্ণুপুর: গল্পের মতোই সত্যি! কারও মনে হবে টলিউডের সিনেমা। নরমে-কঠিনে এক অসাধারণ চিত্রনাট্য। যার কাহিনিকার বিধাতা। চরিত্ররা কাল্পনিক নয়। খাঁটি রক্তমাংসের। শেষ দৃশ্যটিও প্রেমের জয়। কারণ, এই গল্পের নায়িকার নামটিও যে জয়া। সহনায়ক তার স্বামী ওরফে শান্তনু।
জীবন সংগ্রামে ওরা সফল। নিজের পায়ে দাঁড়াতে ওরা বেছে নিয়েছে ফুটপাতের ব্যবসা। বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী লালবাঁধের পাড়ে ফুচকা, ঝালমুড়ি ও লস্যি বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। অনেকেরই মনে হবে, এ আর এমন কী! কিন্তু, মোচড় আছে এই কাহিনিতে।
দোকানের পাশেই পড়াশোনা একমাত্র ছেলের
বিষ্ণুপুর শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের তিলবাড়ি নামোপাড়ার বছর তিরিশ বয়সের যুবক শান্তনু লোহার। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। আর্থিক অনটনে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি শান্তনু। অল্প বয়সে গাড়ি চালানো শিখে সংসারের হাল ধরেন। অন্যের গাড়িতে চালকের আসনে বসেই উপার্জন শুরু করে দেয় শান্তনু। জয়ার সঙ্গে তাঁর প্রেম এক দশক আগে। স্থানীয় এক কলেজে পড়তেন জয়া। প্রেমের সেই সম্পর্ক আজও মেনে নেয়নি জয়ার বাপেরবাড়ি। তবুও বিয়ে করে জয়া ও শান্তনুর চলছিল সুখেশান্তিতে সংসার।
আরও পড়ুন:Jhalda Murder: ঝালদায় নিহত তপন কান্দুর ছেলেকে প্রাণে মারার হুমকি, আতঙ্কে কান্দু পরিবার
বিয়ের এক বছরের মাথায় দুর্ঘটনায় হাঁটুতে গুরুতর চোট পান শান্তনু। সুস্থ হলেও চালকের আসনে ফেরা হয়নি। বাধ্য হয়ে মাছ বিক্রি শুরু করেন। কিন্তু, হাঁটুর চোটে বসে মাছ বিক্রি করাও সমস্যার হয়। সেই ব্যবসা ছেড়ে ঋণ নিয়ে শুরু করেন ঠেলাগাড়ির দোকান। এই ব্যবসায় পাশে দাঁড়ান স্ত্রী জয়া। পাশের বাড়ির মোবাইলে ইউটিউব থেকে শিখে ফেলেন ফুচকা বানানোর কৌশল। দুজনে মিলে শুরু করেন এক নতুন অধ্যায়ের।
দোকানে কাজে ব্যস্ত শান্তনু
সাতসকালে ঠেলা নিয়ে তাঁরা হাজির হয়ে যান লালবাঁধের পাড়ে। লালবাঁধ পর্যটক ও এলাকার মানুষে সব সময় ভিড় থাকে। ঐতিহ্যের লালবাঁধ সাজিয়ে তোলা হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। তাই লালবাঁধের পাড়কে ব্যবসার আদর্শ জায়গা বেছে নিয়েছেন ওই দম্পতি। সেখানে ফুচকা, চপ, পাপড়ি চাট ঝালমুড়ি, গরমে নতুন সংযোজন লস্যি ও শশা বিক্রি করেন। শুধু দুজনে নয় একমাত্র সন্তানকেও সঙ্গে নিয়ে আসেন তাঁরা। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছেলে স্কুল ছুটির পরে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে দিনভর। লালবাঁধের পাড়ে মাদুর পেতে ছেলেকে পড়ান জয়া।
শান্তনু বলেন, স্ত্রী ছাড়া এই ব্যবসা সম্ভব হতো না। দুজনের পরিশ্রম বিফলে যাবে না বলেও আশাবাদী শান্তনু। জয়া জানান, ছেলেকে মানুষ করতে আমাদের এই সংগ্রাম চলবে। নিজে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পরে আর পড়তে পারেননি। তাই ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করতে হবে, এই স্বপ্ন তাঁর দুচোখে।