বীরভূম: কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাঁসুলিবাঁক এখন ধ্বংসের পথে। কুঁয়ে নদীতে চলছে মাটি মাফিয়ারাজ। দিনের আলোয় নদীগর্ভ থেকে লুট করা হচ্ছে মাটি। নদীর ১০০ মিটারের মধ্যে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। নির্বিকার প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই অবস্থা চলতে থাকলে রাজ্যের মানচিত্র থেকে মুছে যাবে হাঁসুলিবাঁকের ভৌগোলিক চরিত্র।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘হাঁসুলিবাঁকের উপকথা’র সেই হাঁসুলিবাঁক ক্রমশ অবলুপ্তির পথে। দিনদুপুরে নদীগর্ভ থেকে অবাধে তোলা হচ্ছে মাটি। নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তিন তিনটে ইটভাটা ক্রমশ নষ্ট করছে হাঁসুলিবাঁকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এমনটাই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন গ্রামবাসীরা।
কিন্তু এই হাঁসুলিবাঁকের উন্নয়নের গল্প, ও তার প্রাথমিক রূপরেখা শুনিয়েই দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীকে সান্ত্বনা দিয়ে আসছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। মাস পাঁচেক আগেও এই হাঁসুলিবাঁকে এসে ঘুরে গিয়েছেন জেলাশাসক বিধানচন্দ্র রায়। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন, খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে হাঁসুলিবাঁকে। পর্যটক টানতে নতুন করে সাজানো হবে জায়গাটি। কিন্তু সেদিন থেকে কেটে গেল পাঁচ মাস, হাঁসুলিবাঁকের উন্নয়নের জন্য একটুকরো ইট পর্যন্ত নামেনি সেখানে।
হাঁসুলিবাঁকের ইটভাটা
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই হাঁসুলিবাঁক এক সময়ে ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। বেল, জাম, আমের মতো বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও অন্যান্য গাছের সমাহার ছিল এই হাঁসুলিবাঁকে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ইটভাটা, বালি খাদান, মাটি খাদান এই সমস্ত গড়ে তোলার ফলে নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে সমস্ত গাছ। পুলিস-প্রশাসনের চোখের সামনে কেটে ফেলা হচ্ছে নদীগর্ভের মাটি। শুধু তাই নয়, বিপজ্জনকভাবে মাটি তোলা হচ্ছে নদীবাঁধ থেকেও। কিন্তু প্রশাসন কার্যত নির্বিকার এবং তার জেরে বাড়ছে আরও বড় বিপদের আশঙ্কা। তাই অবলুপ্তির গর্ভে তলিয়ে যেতে বসেছে তারাশঙ্করের সেদিনের হাঁসুলিবাঁক।
আরও পড়ুন- Malda Corona : মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি অলোক রাজোরিয়া করোনা আক্রান্ত
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কিন্তু রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে আলাদা জায়গা দিয়েছেন বীরভূম জেলাকে। কিন্তু হাঁসুলিবাঁকের বর্তমান যা অবস্থা এবং জেলা প্রশাসনের উদাসীনতায় আগামী দিনে এই হাঁসুলিবাঁকের ভৌগোলিক চরিত্রই মানচিত্র থেকে উধাও হয়ে যাবে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।